(ADAM AND EVE’S TESTING AND FALL)
ক) আল্লাহ একটি পরীক্ষা করলেন
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে —
পয়দায়েশ ১:১৬ “ফলত আল্লাহ্ দিনের উপরে কর্তৃত্ব করতে একটি মহাজ্যোতি ও রাতের উপরে কর্তৃত্ব করতে তার চেয়ে ক্ষুদ্র একটি জ্যোতি— এই দুটি বড় জ্যোতি এবং নক্ষত্রগুলো সৃষ্টি করলেন।“
ব্যাখ্যা
অনেক জাতির মধ্যে দেখা যায় পুরুষ ও নারী উভয়ই তাদের মন মতো স্বামী বা স্ত্রী পছন্দ করে বিয়ে করতে পারে। সঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পিতা-মাতা কেবল উপদেশ দেন। এটাই তাদের জন্য উত্তম, কারণ বিয়ের মাধ্যমে তারা দুজন সারা জীবন একসাথে থাকতে পারবে। অনেক পুরুষই আছেন যারা যতক্ষণ পর্যন্ত না নিশ্চিত হন কোন নারীর সম্পর্কে যে সে নারী অন্য সকল পুরুষদের থেকে তাকেই বেশী ভালোবাসবে ততোক্ষণ তারা বিয়ে করেন না।
আল্লাহ, তিনিও নিশ্চিত হতে চাইছিলেন যে দুজনকে তিনি সৃষ্টি করেছেন তারা তাকে ভালোবাসতেন ও বিশ্বাস করতেন কিনা, এবং তাই তিনি তাদের পরীক্ষা করলেন। সেই বিশাল বাগানে লক্ষাধিক গাছের মধ্যে তিনি কেবলমাত্র একটি গাছ সৃষ্টি করলেন যার ফল তারা খেতে পারবেন না। এই গাছের নাম ছিল “নেকী-বদী-জ্ঞানের বৃক্ষ”।
এই পর্যন্ত তারা শুধু ভালো ভালো বিষয়ের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন, কিন্তু এই নিষিদ্ধ ফল আহারের মাধ্যমে তারা মন্দতার অভিজ্ঞতা লাভ করতে যাচ্ছিলেন।
তবুও এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াটা খুবই সোজা ছিল। এই পরীক্ষায় পাস করতে তাদেরকে খুব বুদ্ধিমান বা অনেক পড়াশুনা করবার দরকার ছিল না, তাদেরকে শুধু বাধ্য হতে বলা হয়েছিল। তাদের হাতেও যথেষ্ট সময় ছিল আল্লাহ তাদের কি কি দিয়েছেন তা পর্যালোচনা করবার এবং এখন সময় এসে গিয়েছিল যে তারা আল্লাহকে তাদের প্রভু হিসেবে মান্য করে কিনা। আসুন দেখি তারা কি করেছিল।
খ) মনূষ্য শয়তান দ্বারা প্রলোভিত হলো
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে
পয়দায়েশ ৩:১ “মাবুদ আল্লাহ্র সৃষ্ট ভূচর প্রাণীদের মধ্যে সাপ সবচেয়ে ধূর্ত ছিল। সে ঐ নারীকে বললো, আল্লাহ্ কি সত্যিই বলেছেন, তোমরা এই বাগানের কোন গাছের ফল খেয়ো না? ২ নারী সাপকে বললেন, আমরা এই বাগানের সমস্ত গাছের ফল খেতে পারি; ৩ কেবল বাগানের মাঝখানে যে গাছটি আছে তার ফলের বিষয় আল্লাহ্ বলেছেন, তোমরা তা ভোজন করো না, স্পর্শও করো না, করলে মরবে। ৪ তখন সাপ নারীকে বললো, কোনক্রমে মরবে না; ৫ কেননা আল্লাহ্ জানেন, যেদিন তোমরা তা খাবে সেদিন তোমাদের চোখ খুলে যাবে, তাতে তোমরা আল্লাহ্র মত হয়ে নেকী–বদীর জ্ঞান লাভ করবে। ৬ নারী যখন দেখলেন, ঐ গাছটির ফল সুখাদ্যদায়ক ও দেখতেও খুবই আকর্ষণীয়, আর সেটি জ্ঞানদায়ী বৃক্ষ বলে আকাঙ্খা করার মত, তখন তিনি তার ফল পেড়ে ভোজন করলেন। পরে সেই ফল তাঁর স্বামীকে দিলে তিনিও ভোজন করলেন। ৭ তাতে তাঁদের উভয়ের চোখ খুলে গেল এবং তাঁরা বুঝতে পারলেন যে তাঁরা উলঙ্গ; আর ডুমুরের পাতা সেলাই করে ঘাগ্রা প্রস্তুত করে নিলেন।“
ব্যাখ্যা
এখানে আমরা বাগানে আরেকজনকে খুযে পাই। সে হলো শয়তান যে সাপের বেশে এসেছে। যে আগে আল্লাহর একজন ফেরেশতা ছিল। কিন্তু পরে সে অহংকারী ও দাম্ভিক হয়ে উঠে। সে আল্লাহর সমকক্ষ হতে চাইলো মানে আল্লাহ হতে চাইলো। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত করলেন এবং সে আল্লাহর শত্রু হয়ে গেল। আল্লাহকে আক্রমণ করার ক্ষমতা তার ছিল না, তাই সে আল্লাহর প্রিয় দুইজনকে ছলনা করে সফল হলো।
শয়তানের প্রতারণা
শয়তান অপেক্ষা করছিল কখন হাওয়া একা সময় কাটাবে এবং ঠিক তখনই সে তার ছলনার বীজ বুনবে।
শয়তান হাওয়াকে স্পর্শ করতে পারেনি কিন্তু তার ছল চাতুরী কথা দিয়ে তাকে বোকা বানিয়েছিল। সে হাওয়াকে এটা বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছিল যে আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন না এই জন্যই তাকে সেই গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছেন। সে তাকে বললো ঐ গাছের ফল খেয়ে তুমি অনেক বুদ্ধিমান হতে পারবে। আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছিলেন যেন যা ভালো সে যেন শুধু তাই উপভোগ করতে পারে। সেই ফল খেয়ে, সে এটাও বুঝতে পারবে কি কি বিষয় মন্দ। এভাবেই তার জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পাবে। আর তখনই সে আল্লাহর মতো হতে পারবে। শয়তান এটাই তাকে বুঝিয়েছিল।
হাওয়া শয়তানের কথা বিশ্বাস করলো যে মন্দ বিষয় জানাও ভালো এবং সে আল্লাহকে অবিশ্বাস করলেন যিনি তাকে সকল মন্দতা থেকে দূরে রেখেছিলেন। সে শয়তানের মিথ্যা বিশ্বাস করলেন যে আল্লাহ তার থেকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ জিনিস দূরে রেখেছেন, যা হলো মন্দতাকে জানা যা আল্লাহ তার থেকে দূরে রেখেছেন। সে বিশ্বাস করলো যে শয়তান তার চোখ খুলে দিয়েছে যে আল্লাহ তার প্রতি ভালো নন। যার মানে হলো হাওয়া আর তার জীবনের বিষয়ে আল্লাহকে বিশ্বাস করতে পারে না। আল্লাহর সম্পর্কে তার ধারণা পরিবর্তিত হয়ে গেল।
আর এভাবেই হাওয়া আল্লাহকে প্রত্যাখান করলো এবং নিজেকে আর আল্লাহের অধীনে রাখলো না। এভাবেই সে আর খোদাকে তার আল্লাহ বলে স্বীকার করলো না। এবং এরপর থেকেই তার জীবনের সকল সিদ্ধান্ত সে নিজেই নিতে চাইলো তা আল্লাহর ভালো লাগুক আর নাই লাগুক। যার সারমর্ম এই সেই তার নিজের ইচ্ছামত চলবে যার অর্থ হলো সে নিজেই নিজের খোদা হবে।
বিদ্রোহী কার্য সম্পাদন
হাওয়া যা চিন্তা করলো তাই কার্যে রুপান্তরিত হলো। তিনি সেই ফল খেলেন এবং আদমকেও কিছুটা দিলেন যিনি একটু পরেই এলেন, এবং তিনিও সেই ফল খেলেন।
কার্যের ফলাফল
ফল খাওয়ার পরপরই তারা বুঝতে পারলো তাদের মধ্যে এক বিশাল পরিবর্তন এসেছে। তারা ভীত হলেন এবং নিজেদের এই হীন কার্যে লজ্জিত হলেন।
আল্লাহের রুহ যিনি এই দুনিয়ায় ও তাদের মধ্যে আলো ও জীবন নিয়ে এসেছেন, তিনি প্রস্থান করলেন এবং অন্ধকার ও মৃত্যু সেখানে চলে এলো।
পাপের দরুন প্রথম যেখানে বড় প্রভাব পড়লো তা হলো তাদের যৌন জীবনে। যেহেতু খোদা স্নেহময়ী ছিলেন, তাই তারাও একে অন্যকে সত্যিকারভাবে ভালোবাসতেন। তাদের শারিরিক মিলনও ঘটতো তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ থেকে, নিজে সুখ অনুভবের চেয়ে চাইতো একে অন্যকে বেশি তৃপ্ত করতে। এটা ছিল হৃদয়ে অনুভূত ভালোবাসাকে শারিরিকভাবে বহিঃপ্রকাশ। সত্য ভালোবাসা মানে শুধু প্রাপ্তি নয়, সত্য ভালোবাসা মানেই হলো দেওয়া, সেখানে পাওয়ার থেকে দেওয়াই বেশি থাকে।
তাই একটা বড় নাটকীয় পরিবর্তন এসেছিল। এরপর তারা যখন একে অন্যের নগ্ন দেহ দেখেছিল তারা আর সেই স্নেহপূর্ণ ভালোবাসা অনুভব করলেন না, কিন্তু দৈহিক বাসনা চারিতার্থের কামনা অনুভব করলেন।
আরও যে সমস্যা হল, তারা তাদের মন থেকে এসব মন্দ চিন্তা বের করতে পারছিলেন না। যা খুব শোচনীয় ছিল, তাই তারা তাড়াহুড়ো করে ডুমুর গাছের পাতা সেলাই করতে শুরু করলেন যেন একজন আরেকজনের চোখ থেকে নিজেকে আড়াল করতে পারেন। শুধু তাই নয়, তারা যখন চারপাশের সুন্দর গাছ ও পশুপাখি দেখতো, সেখানেও তাদের হৃদয়ে উদাসীনতা অনুভব করতেন। তারা আল্লাহর সৃষ্টি আর উপভোগ করতে পারছিলেন না কারণ তারা মন্দ হয়ে গিয়েছিলেন।
মানুষ মন্দতাকে কেবলমাত্র জানতে পারে মন্দতার অভিজ্ঞতা লাভ করে এবং একবার মন্দ কাজে পড়লে তার জীবনের উপর তার আর নিজের নিয়ন্ত্রন থাকে না, এবং এই মন্দতা থেকেও সে তার নিজের কাজ বা চেষ্টায় মুক্তি লাভ করতে পারে না। মন্দতার জ্ঞান নিরপেক্ষভাবে জানা যায় না। আপনি যদি কোন নির্দিষ্ট ফল কখনো না খান, আপনি শুধু ঐ ফলকে দোকানে দেখে তার স্বাদ কেমন তা জানতে পারবেন না, স্বাদ জানতে আপনাকে অবশ্যই ঐ ফলে কামড় দিতে হবে, তা চাবাতে হবে এবং তারপর গলাধঃকরণ করতে হবে। আর যদি সেই ফল বিষাক্ত হয় তবে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের নিকট যেতে হবে নয়তো মরতে হবে। একইভাবে, গুনাহ না করলে তা কেমন তা জানা যায় না।
মন্দতার অনুভূতি প্রথমে মিষ্টি লাগলেও পরে আপনার মুখ তেতো হয়ে যায় এবং আপনার আত্বা কষ্ট পায় এবং আস্তে আস্তে কবরের প্রতি চলতে শুরু করে।
আদম ও হাওয়া পাপ করার সাথে সাথে সেখানে মারা যাননি। কিন্তু তাদের আত্বিক (ভিতরের) মৃত্যু প্রথমে এসেছিল তাত্ক্ষণিকভাবেই, যা প্রভাব ফেলতে শুরু করে তাদের শরীরে, যা পরিশেষে তাদের শারিরিক মৃত্যুও ঘটিয়েছিল।
গ) আল্লাহ স্বয়ং এলেন উদ্ধারে
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে
পয়দায়েশ ৩:৮ “পরে তাঁরা মাবুদ আল্লাহ্র আওয়াজ শুনতে পেলেন, সন্ধ্যার বাতাস যখন বইতে শুরু করছিল তখন মাবুদ বাগানে বেড়াচ্ছিলেন। তাতে আদম ও তাঁর স্ত্রী মাবুদ আল্লাহ্র সম্মুখ থেকে চলে গিয়ে বাগানের গাছগুলোর মধ্যে লুকালেন। ৯ তখন মাবুদ আল্লাহ্ আদমকে ডেকে বললেন, তুমি কোথায়?“
ব্যাখ্যা
গুনাহ্ প্রথমে আল্লাহর বিরুদ্ধে কৃতকর্ম
খোদা আদম ও হাওয়ার একমাত্র বন্ধু ছিলেন এবং সবচেয়ে কাছের ছিলেন, কিন্তু ঐ সময়ের মধ্যে তারা আল্লাহকে তাদের শত্রু হিসেবে নির্বাচিত করলেন, যে শত্রু তাদের থেকে অধিক শক্তিশালী এবং এখন হঠাৎ তারা আল্লাহকে ভীষণ ভয় পেতে শুরু করলেন।
প্রত্যেক মানুষই কোন খারাপ কাজ করার পরে বিবেকের দংশনে কষ্ট পায় এবং আল্লাহর ভয় ও মৃত্যুর ভয় তার মধ্যে কাজ করতে শুরু করে।
গুনাহ্ হলো প্রথমত আল্লাহর বিরুদ্ধে করা কোন ভূল। গুনাহ্কারী জানেন যে তিনি এমন কাজ করেছেন যা আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যায়। ব্যাপারটি এমন যে একটি শিশু জানে যে টেবিল থেকে কোল্ড ড্রিংক নিয়ে খাওয়া তার জন্য নিষেধ, তবুও সে তার আব্বার সামনেই কোল্ড ড্রিংক নেয়। এটা করে সেই বাচ্চাটি তার পিতাকে তার বন্ধুদের সামনে লজ্জিত করে।
এমন কাজে আসল অন্যায় হলো যে নিজে জেনেই পিতামাতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়া এবং সে অন্যায়কে গুরুত্ব না দেয়া। আদম আর হাওয়া একজন আরেকজনকে আঘাত করেন নি, তারা কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট ফল খেয়েছিলেন। বেশিরভাগ মানুষেরই এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে যে একজন শুধুমাত্র একটা নিষিদ্ধ ফল খেয়েই আল্লাহর বিরুদ্ধে গুনাহ্ করতে পারেন। গুনাহ্ মানেই মন্দতা কারণ এটা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, এটা আল্লাহকে লজ্জিত করে। তাই, কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে —
ইয়াকুব ২:১০ কারণ যে কেউ সমস্ত শরীয়ত পালন করে, কেবল একটি বিষয়ে হোঁচট খায়, সে সকলেরই দায়ী হয়েছে।
গুনাহ্ আল্লাহ ও গুনাহ্কারীর মাঝে এক দেওয়াল তুলে দেয়
গুনাহ মানুষকে বাধ্য করে তা ঢাকতে চেষ্টা করতে। সে আল্লাহর চোখের থেকে তার কৃত খারাপ কাজ লুকাতে চেষ্টা করে। যখন সে গুনাহের জন্য নিজেকে অপরাধী মনে করে, তখন সে আল্লাহর থেকে নিজেকেই লুকাতে চেষ্টা করে। কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে, আল্লাহের বিচারের দিনে অনেক মানুষ পাহাড়কে ডেকে বলবে আমাদের ঢেকে দাও।
আদম ও হাওয়া গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছিলেন যখন তারা আল্লাহর কন্ঠ শুনেছিলেন। কিন্তু তিনি তাদের নাম ধরে ডাকতেই থাকলেন এবং এক সময় তারা বাইরে বেড়িয়ে এলেন।
একদিন আসবে যেদিন আল্লাহ এই দুনিয়ার সকল মানুষকে বিচার করবেন। তাই যখন এখন তিনি তার লোকদের ডাকেন, তাদের ভয় পাওয়ার কোন দরকার নেই, এবং ডাকে সাড়া দিতে লজ্জা কাজ করলেও তাকে প্রশ্রয় দেওয়ার প্রয়োজন নেই কারণ তিনি ডাকছেন বেশি দেরী হওয়ার পূর্বেই অর্থ্যাৎ কেয়ামতের আগেই তাদের সাহায্য করতে। হ্যা, প্রথমে তিনি গুনাহ্ দূর করবার ব্যবস্থা করবেন, এবং তারপর তিনি তার লোকদেরকে তার সাথে রাখবেন, যেন তার লোকেরা আবার তার সাথে চলতে পারেন।
প্রতিবন্ধকতা ভাংতে আল্লাহ পদক্ষেপ নিলেন
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—-
পয়দায়েশ ৩:৯ “তখন মাবুদ আল্লাহ্ আদমকে ডেকে বললেন, তুমি কোথায়? ১০ তিনি বললেন, আমি বাগানে তোমার আওয়াজ শুনে ভয় পেয়েছি, কারণ আমি উলঙ্গ, তাই নিজেকে লুকিয়েছি।
১১ তিনি বললেন, তুমি যে উলঙ্গ তা তোমাকে কে বললো? যে গাছের ফল ভোজন করতে তোমাকে নিষেধ করেছিলাম তুমি কি তার ফল ভোজন করেছ?
১২ তাতে আদম বললেন, তুমি আমার সঙ্গীনী করে যে স্ত্রী দিয়েছ, সে আমাকে ঐ গাছের ফল দিয়েছিল, তাই খেয়েছি।
১৩ তখন মাবুদ আল্লাহ্ নারীকে বললেন, তুমি এ কি করলে?
নারী বললেন, সাপ আমাকে ভুলিয়েছিল, তাই খেয়েছি।“
ব্যাখ্যা
একটি বিচার বসলো সেখানে। যেখানে কোন উকিল ছিল না এবং মাবুদ আল্লাহই সেখানে একমাত্র বিচারক।
যখন কাউকে হাতে নাতে ধরা হয় তখন কোনভাবেই সে আর তার পাপ ঢাকতে পারে না, তবুও তখন সে চেষ্টা করে তার দোষ অন্য কারো ঘারে চাপাতে বা পরিস্থিতির অজুহাত টানতে। কেউ কেউ আবার আল্লাহকেই দোষী করে আদমের মতো দুঃসাহস দেখান। তিনি আল্লাহকেই দোষারোপ করে বলেছিলেন তিনিই তাকে এমন এক স্ত্রী দিলেন যে তাকে বিপথে চালিত করলো। আবার হাওয়া দোষ দিলেন সর্পকে কারণ সে তাকে প্রতারিত করেছে।
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—-
পয়দায়েশ ৩:১৪ “পরে মাবুদ আল্লাহ্ সাপকে বললেন, তুমি এই কাজ করেছ, এজন্য গৃহপালিত ও বন্য পশুদের মধ্যে তোমাকে সবচেয়ে বেশি বদদোয়া দেওয়া হল; তুমি বুকে হাঁটবে এবং সারা জীবন ধূলি ভোজন করবে। 15আর আমি তোমাতে ও নারীতে এবং তোমার বংশে ও তার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাব; সে তোমার মাথা চূর্ণ করবে এবং তুমি তার পায়ের গোড়ালি চূর্ণ করবে।
16পরে তিনি নারীকে বললেন, আমি তোমার গর্ভ বেদনা অতিশয় বৃদ্ধি করবো, তুমি বেদনাতে সন্তান প্রসব করবে। স্বামীর প্রতি তোমার বাসনা থাকবে এবং সে তোমার উপরে কর্তৃত্ব করবে।
17আর তিনি আদমকে বললেন, যে গাছের ফলের বিষয়ে আমি তোমাকে বলেছিলাম, তুমি তা ভোজন করো না, তুমি তোমার স্ত্রীর কথা শুনে সেই গাছের ফল ভোজন করেছ। তাই তোমার দরুন ভূমিকে বদদোয়া দেওয়া হল; তুমি সারা জীবন কষ্ট করে তা ভোগ করবে; 18আর তাতে তোমার জন্য কাঁটা ও শেয়ালকাঁটা জন্মাবে এবং তুমি ক্ষেতের ওষধি ভোজন করবে। 19তুমি যে মাটি থেকে গৃহীত হয়েছ, যে পর্যন্ত সেই মাটিতে ফিরে না যাবে, ততদিন তুমি ঘর্মাক্ত মুখে আহার করবে; কেননা তুমি ধূলি এবং ধূলিতে ফিরে যাবে।“
ব্যাখ্যা
বিচারের শুনানি করতে আল্লাহের বেশী সময় লাগলো না কারণ তিনি সবই জানতেন যে সেখানে কি হয়েছিল। এখানে দুটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ যা আমাদের লক্ষ্য করা প্রয়োজন-
- প্রথমতঃ আল্লাহ পবিত্র, যার অর্থ তিনি নৈতিক দিক থেকে সম্পূর্ণ পরিস্কার। তিনি কখনো পাপ করেননি ও করবেনও না। তিনি প্রচন্ডভাবে পাপ ঘৃণা করেন, এবং একমাত্র আইন প্রণয়নকারী ও বিচারক হিসেবে তিনি প্রত্যেকটি পাপের বিচার করবেন। তিনি কাউকেই ক্ষমা করবেন না। এমনকি আদম ও হাওয়া, যারা আল্লাহর এতো কাছের মানুষ ছিলেন, সন্তানের মতো ছিলেন, তবুও তারা নির্বাসিত হয়েছিলেন যদিও তারা ছিলেন সর্ব প্রথম অপরাধী। বেহেস্তের আদালতে, কেউই পাপের শাস্তি হতে ছাড় পাবে না।
এখন আপনারা বলবেন “কিন্তু খোদা তো অনেক ক্ষমাশীল?” ঠিক, তিনি ক্ষমাশীল, কিন্তু কোন গুনাহগারকে ক্ষমা করতে গিয়ে তিনি অন্যায় করবেন না, তাহলে তো তিনি সেই পাপকর্ম এর সমর্থক হয়ে যাবেন। পাপীদেরকে ক্ষমা করতে, তার পুত্র, ঈসাকে সবার প্রথমে পাপীদের জন্য, এবং পাপীরা যেন মাফ পেতে পারে সেইজন্য তাকে শাস্তিভোগ করতে হয়েছিল। একমাত্র এই উপায়ে আল্লাহ একজন ন্যায়বান বিচারক ও ক্ষমাশীল পিতা হতে পারেন।
- দ্বিতীয়ত, আমাদেরকে এটা লক্ষ্য করতে হবে যে আল্লাহ ওয়াদা করেছিলেন যে নারীর বংশ শয়তানের মস্তক চূর্ণ করবে। এর অর্থ হলো নারী থেকে এমন কেউ আসবে যে শয়তানের সাথে যুদ্ধ করবে। এখানেই আমরা ঈসা মসীহের আগমনের প্রথম ওয়াদা খুজে পাই যিনি শয়তানকে পরাজিত করবেন মানুষের গুনাহের জন্য সলিবের উপর মৃত্যুবরণের মাধ্যমে।
যে উপায়ে আল্লাহ গুনাহের প্রতিবন্ধকতা ভাংলেন
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—
পয়দায়েশ ৩:২১ আর মাবুদ আল্লাহ্ আদম ও তাঁর স্ত্রীর জন্য চামড়ার পোশাক প্রস্তুত করে তাঁদেরকে পরালেন।
ব্যাখ্যা
বিচারে্র শুনানী যখন শেষ হলো এবং দোষী প্রমাণিতদেরকে আজীবনের দন্ডাদেশ দেওয়া হল, তারপর বিচারক আদালত মুলতবি ঘোষনা করলেন এবং তিনি তার বুদ্ধিভ্রষ্ট সন্তানদের কাছে এলেন।
তিনি এলেন আকজন ডাক্তারের মতো কারণ তাদের রোগের সঠিক ওষুধ আল্লাহের কাছে ছিল।
কিন্তু সেই ওষুধের মূল্য ছিল ভয়ানক; এটা ছিল আল্লাহের সৃষ্ট দুটি নিষ্পাপ প্রাণীর রক্ত ও জীবন। আল্লাহ স্বয়ং নিজেই ঐ প্রানীদুটোকে ধরলেন, মারলেন, চামড়া ছাড়ালেন এবং সেই চামড়া দিয়ে তাদের পোশাক বানালেন তাদের নগ্নতা ঢাকতে যেন আর লজ্জা পেতে না হয়। একবার যখন তারা লোমশ বস্ত্র পরিধান করলেন, তারা আবার আল্লাহের সামনে এসে কথা বলতে পারলেন এবং তাদের বাকী জীবন আল্লাহর সাথে যোগাযোগ রাখতে পারলেন।
এই একটি আয়াতে যা যা ঘটেছিল তা অনেক সংক্ষিপ্ত হলেও তার প্রয়োগিক ব্যাপ্তি অনেক বেশী। পশুর রক্ত অবশ্যই তাদের গুনাহ মুছে ফেলতে পারেনি কিন্তু তা ভবিষ্যতের আভাস হিসেবে একটি ছবি প্রকাশ করছে, ঠিক যেমন আমরা বলছিলাম, ঐ ঘটনার অনেক শতাব্দী পরে খোদা তার নিষ্পাপ পুত্রকে মানুষের গুনাহের জন্য তাকে সলিবের উপর মৃত্যুবরণ করতে পাঠাবেন।
পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে আমরা এই বিষয়েই আলোচনা করবো।
//////////