আমাদের অনুতাপ, পানির তরিকাবন্দী, আত্ব সাক্ষ্য এবং  অংশীদারিত্ব

(REPENTANCE, BAPTISM, TESTIMONY, FELLOWSHIP)

অনুতাপ ও নাজাত

যে সাক্ষ্য পিতর সেদিন জেরুজালেমের সেই সুন্দর একটি দিনে    তাদেরকে দিয়েছিলেন, তা আজকের দিনেও প্রযোয্য। যারা তার কথা সেদিন শুনেছিলেন আমরা তাদের থেকে আলাদা নই।

তারা এমন মানুষ ছিলেন না যারা শুধু দিন দুনিয়া নিয়েই ব্যস্ত বা আল্লাহতায়ালার সম্পর্কে তাদের কোন আগ্রহ ছিল না। তারাও বিভিন্ন দেশের  ধার্মিক লোক ছিলেন এবং তারা অনেকেই অনেক দুরত্ব পাড়ি দিয়ে, কাড়ি কাড়ি অর্থ ব্যয় করে সেদিন জেরুজালেমে এসেছিলেন ঈদুল ফেসাখ উদযাপন করতে। তারা সেখানে দামী দামী পশু কোরবানি দিতেন এবং ইবাদতগারে টাকা দান করতেন।

সবকিছু করবার পরেও তারা উপলব্ধি করতে পারতেন যে তারা ভালো হয়ে থাকতে চাইলেও তাদের ইচ্ছাশক্তি ছিল দুর্বল তাই তারা সেসব কথা বলতো বা কাজ করতো যা আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে। তারা এটাও বুঝতে পারতেন যে পশু রক্ত কখনো মানুষের পাপের মূল্য পরিশোধ করতে পারে না। তাই, যখন তারা শুনলেন, যে কোরবানি আল্লাহর পুত্র দিয়েছেন নিজের জীবন দিয়ে এবং আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে তাকে মৃত্যু থেকে উঠিয়েছেন, তখন তারা আনন্দের সাথে ঈমান আনলেন ও চিরস্থায়ী মৃত্যু থেকে রক্ষা লাভ করলেন।

এই বিষয়ে আল্লাহর যে কালাম আপনার আমার জন্য প্রযোজ্য তা হলো:

রোমীয় ৩:২৩-২৫ কারণ সবাই গুনাহ্‌ করেছে এবং আল্লাহ্‌র প্রশংসা পাবার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। 24কিন্তু মসীহ্‌ ঈসা মানুষকে গুনাহের হাত থেকে মুক্ত করবার ব্যবস্থা করেছেন এবং সেই মুক্তির মধ্য দিয়েই রহমতের দান হিসাবে ঈমানদারদের ধার্মিক বলে গ্রহণ করা হয়। 25আল্লাহ্‌ প্রকাশ করেছিলেন যে, যারা ঈমান আনে তাদের জন্য ঈসা মসীহ্‌ তাঁর রক্তের দ্বারা, অর্থাৎ তাঁর জীবন্তকোরবানীর দ্বারা তাঁকে সন্তুষ্ট করেছেন। এইভাবেই আল্লাহ্‌ দেখিয়েছেন, যদিও তিনি তাঁর সহ্যগুণের জন্য মানুষের আগেকার গুনাহের শাস্তি দেন নি তবুও তিনি ন্যায়বান।

আপনি এই বইটি এই পর্যন্ত পাঠ করেছেন, এখন যা আমাদের করার বাকী তা হলো, জেরুজালেমে সেদিন যারা যারা জড়ো হয়েছিল তারা যা করেছিল ঠিক তাই করা, এবং তা হলো গুনাহের জন্য অনুতাপ করে ঈসা মসীহকে নাজাতদাতা প্রভু হিসেবে গ্রহণ করা যিনি আপনি যে পাপের বোঝা বহন করছেন তার মূল্য পরিশোধ করছেন। এইজন্য আপনি নিজে আপনার মতো করে মুনাজাত করতে পারেন, বা আপনি নিম্নোক্তভাবে মুনাজাত করতে পারেন:

প্রভু আমি একজন গুনাহগার। আমি আমার নিজের ইচ্ছেমতো চলছি কিন্তু তোমার ইচ্ছা অনুযায়ী নয়। আমি স্বীকার করি যে তুমি সবকিছু সৃষ্টি করেছ এবং সবকিছু তোমারই। আমার জীবনের উপর তোমার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।এখন আমি আমাকে সম্পূর্ণভাবে তোমার কাছে সমর্পন করি। আমি বিশ্বাস করি ঈসা আল্লাহর পুত্র যিনি মানুষ হলেন এবং ক্রুশের উপর আমার শাস্তি নিয়ে মারা গেলেন এবং  আমার গুনাহের মূল্য দিলেন যেন তুমি আমাকে মাফ করতে পার।ধন্যবাদ দেই যে তুমি আমাকে তোমার সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেছো এবং তোমার পাক রুহ আমার হৃদয়ে পাঠিয়ে আমার সাথে তুমি থাকছো। আমিন।

এই মুনাজাত করে বিশ্বাস করুন যে আল্লাহ আপনার প্রার্থনা শুনেছেন এবং আপনার অনুরোধ গ্রহণ করেছেন কারণ কিতাবে লেখা আছে :

মার্ক ১১:২২  তখন ঈসা বললেন, “আল্লাহ্‌র উপরে বিশ্বাস রাখ। 23আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যদি কেউ অন্তরে কোন সন্দেহ না রেখে এই পাহাড়টাকে বলে, ‘উঠে সাগরে গিয়ে পড়,’ আর বিশ্বাস করে যে, সে যা বলল তা-ই হবে, তবে তার জন্য তা-ই করা হবে। 24সেইজন্য আমি তোমাদের বলছি, মুনাজাতের মধ্যে তোমরা যা কিছু চাও, বিশ্বাস কোরো তোমরা তা পেয়েছ, আর তোমাদের জন্য তা-ই হবে।

 বিশ্বাসীদের জন্য পানির তরিকাবন্দী  

তরিকাবন্দী নেওয়ার উদ্দেশ্য   

এখন আপনাকে অবশ্যই পানিতে তরিকাবন্দী নিতে হবে আল্লাহকে এবং মানুষদের জানাতে যে আপনি গুনাহের জন্য অনুতাপ করেছেন এবং ঈসার উপর ঈমান এনেছেন যে তিনিই আপনার নাজাতদাতা।

কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—

কলসীয় ২:১২  তরিকাবন্দীর মধ্য দিয়ে মসীহের সংগে তোমাদের দাফন করা হয়েছে; শুধু তা-ই নয়, যিনি মৃত্যু থেকে মসীহ্‌কে জীবিত করে তুলেছেন সেই আল্লাহ্‌র শক্তির উপর ঈমানের মধ্য দিয়ে তোমাদের মসীহের সংগে জীবিত করে তোলাও হয়েছে।

রোমীয় ৬:৪ আর সেইজন্য সেই তরিকাবন্দীর দ্বারা মসীহের সংগে মরে আমাদের দাফন করাও হয়েছে, যেন পিতা তাঁর মহাশক্তি দ্বারা যেমন মসীহ্‌কে মৃত্যু থেকে জীবিত করেছিলেন তেমনি আমরাও যেন নতুন জীবনের পথে চলতে পারি।

 ব্যাখ্যা

পানিতে তরিকাবন্দী নেওয়ার সময় আপনাকে যখন পানিতে ডোবানো হয়, আপনি এটাই ঘোষণা করেন যে ঈসার সাথে আপনিও সেই কবরে শায়িত হয়েছেন এবং আপনার পুরনো গুনাহের স্বভাবের স্বত্তা তার সাথে মারা গিয়েছে।

এবং যখন আপনাকে পানির উপরে তোলা হয়, তখন আপনি ঘোষণা করেন যে ঈসা যখন পাক রুহের শক্তিতে মৃত্যু থেকে জীবিত হলেন এবং কবর থেকে উঠলেন, আপনিও তখন তার মধ্যে ছিলেন এবং পাক রুহের শক্তিতে আপনিও তখন নতুন জন্মলাভ করলেন, আল্লাহর পুনঃজন্ম লাভ করা সন্তান আপনি এবং ঈসা যেমন জীবিত আপনিও জীবিত থাকবেন।

কিভাবে তরিকাবন্দী নিতে হবে   

তরিকাবন্দী অবশ্যই জনসম্মুখে হতে হবে এবং ঈসাহী অঈসাহী সবাইকেই সেই অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করতে হবেযেন তারা সাক্ষী হয়ে থাকতে পারেন।

একজন সম্মানিত ঈসাহীকেই আপনাকে তরিকাবন্দী দিতে দিন। তাকে অবশ্যই দর্শকদের ব্যাখ্যা করতে হবে যে কেন আপনি তরিকাবন্দী নিচ্ছেন।

আপনাকে মুখেও স্বীকার করতে হবে যে আল্লাহর কাছে আপনি নিজেকে সমর্পিত করেছেন এবং ঈসাকে নাজাতদাতা হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

তরিকাবন্দীর পরে, আপনাকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে যে আপনি আল্লাহর সাথেই আছেন এবং তিনি ধীরে ধীরে আপনার পুরনো গুনাহের জীবনকে শক্তিহীন করছেন পাক রুহের শক্তিতেএবং ঈসার নতুন জীবন আপনার মধ্যে বৃদ্ধি করছেন।

সাক্ষ্যবহন

কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—

প্রকাশিত কালাম ১২:১১ আর মেষশাবকের রক্ত দ্বারা এবং নিজ নিজ সাক্ষ্য দ্বারা, তারা তাকে জয় করেছে; আর তারা মৃত্যু পর্যন্ত নিজ নিজ প্রাণও প্রিয় জ্ঞান করে নি।

ব্যাখ্যা

এখন প্রায়ই আপনি আপনার গুনাহের মাফ পাওয়ার কথা ও আল্লাহ প্রতিদিন আপনার জীবনে কি কি রহমত করছেন তার সাক্ষ্য সবাইকে বলতে শুরু করেন। এবং এটা করার মাধ্যমে আপনি গুনাহ ও ইবলিশের বিরুদ্ধে জয় লাভ করতে থাকেন।

সহভাগিতা

কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—

প্রেরিত ২:৪২  আর তারা প্রেরিতদের শিক্ষায় ও সহভাগিতায়, রুটি ভাঙ্গায় ও মুনাজাতে নিবিষ্ট থাকলো।

ব্যাখ্যা

কিছু কিছু পশু বা পাখিদেরকে দেখা যায় যে তারা সবসময় দলে বা ঝাকে থাকে। দলে থাকায় তারা কখনো একা হয়ে যায় না, একজন অন্যকে প্রতিরক্ষা করেএবং প্রজনন এর সংগী খুজে পায়। ঈসার বিশ্বাসীদের ঠিক একই রকম করা উচিৎ। তাদের উচিত নিজেদেরকে পরিবারের মতো মনে করা, যে পরিবার আল্লাহর পরিবার।

উপরের আলোচ্য বিষয়ে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে ঈসাহীদের জন্য যা হলো:

  • ঈসাহীদের অবশ্যই সহভাগিতা রক্ষা করতে হবে।
  • প্রেরিতগণের শিক্ষায় অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে। তাদের সকল শিক্ষা কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে আমাদের জন্য, সুতরাং একজন ঈসাহীর অবশ্যই কিতাবুল মোকাদ্দস থাকতে হবে এবং প্রতিদিন অধ্যয়ন করতে হবে, তার শিক্ষায় ধ্যান করতে হবে এবং সেই শিক্ষা অনুযায়ী পথ চলতে হবে।
  • মুনাজাত। আমাদের মুনাজাতে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে, তাকে শুকরিয়া জানাতে হবে নাজাত দেওয়ার জন্য, এবং প্রয়োজনীয় সবকিছু প্রদান করার জন্য এবং অন্য সকলের জন্য মুনাজাত করতে হবে।
  • চতুর্থত,আমাদেরকে অন্য বিশ্বাসীদের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতে হবে রুটি ও আঙুর রস দিয়ে প্রভুর ভোজের উদ্দেশ্যে, তার মৃত্যু ও পুনরুত্থান স্মরণে ততোদিন পর্যন্ত যতোদিন তিনি ফিরে না আসেন আমাদেরকে নিয়ে যেতে।

 পরিশেষে 

বিদায় নেয়ার আগে আমি আপনার জন্য মুনাজাত করতে চাই : “মাবুদ আল্লাহ, আমি এখন তোমার কাছে এই বইটির পাঠকের জন্য মুনাজাত করতে চাই। মাবুদ তুমি তাকে জ্ঞানে আলোকিত করো যেন এই বইটির লেখা তিনি বুঝতে পারেন এবং তিনি যেন ঈসার উপর ঈমান আনতে পারেন এবং তোমার উপর ঈমান আনতে তার মধ্যে যেন কোন ভয় না কাজ করে। আমিন।

//////////