(THE SON COMES TO DWELL WITH US)
নাজাতদাতা আগমনের ভবিষ্যতবাণী
হযরত ইব্রাহিমের পরের ২০০০ বছরে অনেক নবীগণ মসীহের আগমণের বিষয়ে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন। আমরা এখানে শুধু দুটি ভবিষ্যতবাণী দেখবো-
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—
- ইশাইয়া ৯:৬ “এই সমস্ত হবে, কারণ একটি ছেলে আমাদের জন্য জন্মগ্রহণ করবেন, একটি পুত্র আমাদের দেওয়া হবে।শাসন করবার ভার তাঁর কাঁধের উপর থাকবে, আর তাঁর নাম হবে আশ্চর্য পরামর্শদাতা, শক্তিশালী আল্লাহ্, চিরস্থায়ী পিতা, শান্তির বাদশাহ্।”
- ইশাইয়া ৫৩:৩ লোকে তাঁকে ঘৃণা করেছে ও অগ্রাহ্য করেছে; তিনি যন্ত্রণা ভোগ করেছেন এবং রোগের সংগে তাঁর পরিচয় ছিল।কে যাকে দেখলে মুখ ফিরায় তিনি তার মত হয়েছেন; লোকে তাঁকে ঘৃণা করেছে এবং আমরা তাঁকে সম্মান করি নি।৪সত্যি, তিনিই আমাদের সব রোগ তুলে নিয়েছেন আর আমাদের যন্ত্রণা বহন করেছেন; কিন্তু আমরা ভেবেছি আল্লাহ্ তাঁকে আঘাত করেছেন, তাঁকে মেরেছেন ও কষ্ট দিয়েছেন। আমাদের গুনাহের জন্যই তাঁকে বিদ্ধ করা হয়েছে; আমাদের অন্যায়ের জন্য তাঁকে চুরমার করা হয়েছে। যে শাস্তির ফলে আমাদের শান্তি এসেছে সেই শাস্তি তাঁকেই দেওয়া হয়েছে; তিনি যে আঘাত পেয়েছেন তার দ্বারাই আমরা সুস্থ হয়েছি।৬আমরা সবাই ভেড়ার মত করে বিপথে গিয়েছি; আমরা প্রত্যেকে নিজের নিজের পথের দিকে ফিরেছি।মাবুদ আমাদের সকলের অন্যায় তাঁর উপর চাপিয়েছেন।৭তিনি অত্যাচারিত হলেন ও কষ্ট ভোগ করলেন, কিন্তু তবুও তিনি মুখ খুললেন না; জবাই করতে নেওয়া ভেড়ার বাচ্চার মত, লোম ছাঁটাইকারীদের সামনে চুপ করে থাকা ভেড়ীর মত তিনি মুখ খুললেন না।
ব্যাখ্যা
প্রথম ভবিষ্যতবাণী আমাদের কাছে বর্ণনা করে যে আল্লাহর পুত্র কত মহান ও চমৎকার হবেন যিনি জন্মগ্রহন করতে যাচ্ছেন। দ্বিতীয় ভবিষ্যতবাণী আমাদের বলে যে ইসরাইল জাতির মধ্যে তিনি জন্মলাভ করবেন তারা তার সাথে কেমন আচরণ করবেন। যদিও তিনি তাদের মতোই একজন ইহুদী হিসেবে জন্মগ্রহন করবেন, তার পিতা-মাতাও একই জাতির মানুষ, তবুও তারা তাকে গ্রহন করবে না এবং সম্মান করবে না, তার বদলে অবমাননা করে তাকে সলিবের উপর হত্যা করবে।
ঈসা মসীহের জন্মলাভের জন্য আল্লাহ দুজন মানুষকে বাছাই করলেন
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—
লূক ১:২৮ ফেরেশতা মরিয়মের কাছে এসে তাঁকে সালাম জানিয়ে বললেন, “মাবুদ তোমার সংগে আছেন এবং তোমাকে অনেক দোয়া করেছেন।”
২৯এই কথা শুনে মরিয়মের মন খুব অস্থির হয়ে উঠল। তিনি ভাবতে লাগলেন এই রকম সালামের মানে কি। ৩০ফেরেশতা তাঁকে বললেন, “মরিয়ম, ভয় কোরো না, কারণ আল্লাহ্ তোমাকে খুব রহমত করেছেন। ৩১শোন, তুমি গর্ভবতী হবে আর তোমার একটি ছেলে হবে। তুমি তাঁর নাম ঈসা রাখবে। ৩২তিনি মহান হবেন। তাঁকে আল্লাহ্তা’লার পুত্র বলা হবে। মাবুদ আল্লাহ্ তাঁর পূর্বপুরুষ বাদশাহ্ দাউদের সিংহাসন তাঁকে দেবেন। ৩৩তিনি ইয়াকুবের বংশের লোকদের উপরে চিরকাল ধরে রাজত্ব করবেন। তাঁর রাজত্ব কখনও শেষ হবে না।”
৩৪তখন মরিয়ম ফেরেশতাকে বললেন, “এ কেমন করে হবে? আমার তো বিয়ে হয় নি।”
৩৫ফেরেশতা বললেন, “পাক-রূহ্ তোমার উপরে আসবেন এবং আল্লাহ্তা’লার শক্তির ছায়া তোমার উপরে পড়বে। এইজন্য যে পবিত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবেন তাঁকে ইব্নুল্লাহ্ বলা হবে। ৩৬দেখ, এই বুড়ো বয়সে তোমার আত্মীয়া এলিজাবেতের গর্ভেও ছেলের জন্ম হয়েছে। লোকে বলত তার ছেলেমেয়ে হবে না, কিন্তু এখন তার ছয় মাস চলছে। ৩৭আল্লাহ্র কাছে অসম্ভব বলে কোন কিছুই নেই।”
৩৮মরিয়ম বললেন, “আমি মাবুদের বাঁদী, আপনার কথামতই আমার উপর সব কিছু হোক।” এর পরে ফেরেশতা মরিয়মের কাছ থেকে চলে গেলেন।
ব্যাখ্যা
পয়দায়েশ ৩:১৫ আয়াতে আমরা পড়েছি যে আল্লাহ ওয়াদা করেছিলেন যে হাওয়ার বংশ থেকে একজন জন্মলাভ করবেন যে সাপ অর্থাৎ শয়তানের মস্তক চূর্ণ করবে। অনেক অনেক বছর পার হয়ে গেছে এত দিনে এবং কোটি কোটি মানুষ এর মধ্যে জন্মলাভ করেছেন ও মারাও গেছেন। তারপর, একদম সঠিক সময়ে, আল্লাহ তার ওয়াদা পুরণ করলেন, এবং তার পুত্র একজন মানুষ হিসেবে জন্মলাভ করলো।
যেহেতু তিনি আল্লাহর পুত্র, তাই তার কোন জাগতিক পিতা ছিল না। আল্লাহর পাক রূহের শক্তিতে মরিয়ম এর গর্ভে ঈসা এসেছিলেন। যে পুত্র তার মধ্য দিয়ে জন্মলাভ করবে তাকে ইবনুল্লাহ বলে ডাকা হবে, কিন্তু তাকে ইবনে্আদম বলেও ডাকা হবে, যেহেতু তার মা একজন মানুষ।
মরিয়মকে ফেরেশতা বলেছিলেন যে সেই পুত্রের না হবে “ঈসা” যার অর্থ “নাজাতদাতা” যিনি গুনাহের শক্তি ও লজ্জা ও শয়তানের হাত থেকে তাদের প্রত্যেককে নাজাত দিবেন যারা তার উপর ঈমান আনবে।
মরিয়ম যখন সব কথা বুঝতে পারলেন, তিনি রাজি হলেন তার মধ্য দিয়ে আল্লাহর পুত্রকে দুনিয়ায় আনতে।
ইউসুফ সম্মতি জানালেন
কিতাবুল মোকাদ্দসে আছে—
মথি ১:১৮-২৫ ঈসা মসীহের জন্ম এইভাবে হয়েছিল। ইউসুফের সংগে ঈসার মা মরিয়মের বিয়ের ঠিক হয়েছিল, কিন্তু তাঁরা একসংগে বাস করবার আগেই পাক-রূহের শক্তিতে মরিয়ম গর্ভবতী হয়েছিলেন। 19মরিয়মের স্বামী ইউসুফ সৎ লোক ছিলেন, কিন্তু তিনি লোকের সামনে মরিয়মকে লজ্জায় ফেলতে চাইলেন না; এইজন্য তিনি গোপনে তাঁকে তালাক দেবেন বলে ঠিক করলেন।
20ইউসুফ যখন এই সব ভাবছিলেন তখন মাবুদের এক ফেরেশতা স্বপ্নে দেখা দিয়ে তাঁকে বললেন, “দাউদের বংশধর ইউসুফ, মরিয়মকে বিয়ে করতে ভয় কোরো না, কারণ তাঁর গর্ভে যিনি জন্মেছে তিনি পাক-রূহের শক্তিতেই জন্মেছেন। তাঁর একটি ছেলে হবে। 21তুমি তাঁর নাম ঈসা রাখবে, কারণ তিনি তাঁর লোকদের তাদের গুনাহ্ থেকে নাজাত করবেন।”
22এই সব হয়েছিল যেন নবীর মধ্য দিয়ে মাবুদ এই যে কথা বলেছিলেন তা পূর্ণ হয়: 23“একজন অবিবাহিতা সতী মেয়ে গর্ভবতী হবে, আর তাঁর একটি ছেলে হবে; তাঁর নাম রাখা হবে ইম্মানূয়েল।” এই নামের মানে হল, আমাদের সংগে আল্লাহ্।
24মাবুদের ফেরেশতা ইউসুফকে যেমন হুকুম দিয়েছিলেন, ঘুম থেকে উঠে তিনি তেমনই করলেন। তিনি মরিয়মকে বিয়ে করলেন, 25কিন্তু ছেলের জন্ম না হওয়া পর্যন্ত তাঁর সংগে মিলিত হলেন না। পরে ইউসুফ ছেলেটির নাম ঈসা রাখল।
ব্যাখ্যা
মরিয়ম ছিলেন ইউসুফের বাগদত্তা এবং কিছুদিনের মধ্যেই তাদের বিয়ে হতে যাচ্ছিল। যেহেতু তারা আল্লাহর কালামের বাধ্য ছিলেন তাই বিয়ের পূর্বে তারা কখনোই মিলিত হননি।
ফেরেশতার কথা মতো মরিয়ম গর্ভবতী হলেন কিছুদিন পরে। মরিয়ম কিন্তু ইউসুফকে বলেননি মাবুদ তার জীবনে কি করেছিলেন। হয়তো তিনি ভয় পেয়েছিলেন যে ইউসুফ তার কথা বিশ্বাস করবে না। যখন এটা পরিস্কার বোঝা যাচ্ছিল যে সে সন্তানসম্ভবা তখন মরিয়ম আর চুপ থাকলেন না।
ইউসুফ প্রচন্ড অবাক ও লজ্জা পেলেন এটা শুনে যে মরিয়মের গর্ভে অন্য কারো সন্তান। যেহেতু, তিনি আল্লাহর বান্দা ছিলেন ও তিনি তাকে ভালোবাসতেন তাই তিনি ঠিক করলেন এটা তিনি কাউকে বলবেন না কিন্তু তার সাথে ঠিকই এই বিয়ে ভাঙ্গবেন। ঠিক তখন আল্লাহ তাকে সপ্নে সব কিছু ব্যাখ্যা করলেন। তখন ইউসুফ শান্তি পেলেন ও মরিয়মকে বিয়ে করলেন।
২২ ও ২৩ আয়াতের কথা, নবী ইশাইয়া ঈসা মসীহের আসার শত শত বছর আগে তিনি ভবিষ্যতবানী করে গিয়েছেন (ইশাইয়া ৭:১৪)।
ঈসার জন্ম
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—
লূক ২:১-৭ “সেই সময়ে সম্রাট অগাস্টাস সিজার তাঁর রাজ্যের সব লোকদের নাম লেখাবার হুকুম দিলেন। 2সিরিয়ার শাসনকর্তা কুরীণিয়ের সময়ে এই প্রথমবার আদমশুমারীর জন্য নাম লেখানো হয়। 3নাম লেখাবার জন্য প্রত্যেকে নিজের নিজের গ্রামে যেতে লাগল।
4-6ইউসুফ ছিলেন বাদশাহ্ দাউদের বংশের লোক। বাদশাহ্ দাউদের জন্মস্থান ছিল এহুদিয়া প্রদেশের বেথেলহেম গ্রামে। তাই ইউসুফ নাম লেখাবার জন্য গালীল প্রদেশের নাসরত গ্রাম থেকে বেথেলহেম গ্রামে গেলেন। মরিয়মও তাঁর সংগে সেখানে গেলেন। এঁরই সংগে ইউসুফের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। সেই সময় মরিয়ম গর্ভবতী ছিলেন এবং বেথেলহেমে থাকতেই তাঁর সন্তান জন্মের সময় এসে গেল। 7সেখানে তাঁর প্রথম ছেলের জন্ম হল, আর তিনি ছেলেটিকে কাপড়ে জড়িয়ে যাবপাত্রে রাখলেন, কারণ হোটেলে তাঁদের জন্য কোন জায়গা ছিল না।”
ব্যাখ্যা
ঈসার জন্ম কোন এই দুনিয়ার রাজার বাড়ীতে হয় নি, কিন্তু গোয়াল ঘরে যাবপাত্রে হয়েছিল যেখানে গৃহপালিত পশু রাখা হত এবং তাদের কে খাওয়ানো হতো। আল্লাহ এমনটি করলেন যেন সব থেকে গরিব মানুষরা এটা বুঝতে পারে যে গরিবদেরকেও আল্লাহ ভালোবাসেন, শুধু বড়লোকদের নয়।
ঈসার জন্মের খবর সর্বপ্রথমে রাখালদের জানানো হল
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—
লূক ২:৮-২০ বেথেলহেমের কাছে মাঠের মধ্যে রাতের বেলায় রাখালেরা তাদের ভেড়ার পাল পাহারা দিচ্ছিল। 9এমন সময় মাবুদের একজন ফেরেশতা হঠাৎ তাদের সামনে উপস্থিত হলেন। তখন মাবুদের মহিমা তাদের চারদিকে উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিল। এতে রাখালেরা খুব ভয় পেল।
10ফেরেশতা তাদের বললেন, “ভয় কোরো না, কারণ আমি তোমাদের কাছে খুব আনন্দের খবর এনেছি। এই আনন্দ সব লোকেরই জন্য। 11আজ দাউদের গ্রামে তোমাদের নাজাতদাতা জন্মেছেন। তিনিই মসীহ্, তিনিই প্রভু। 12এই কথা যে সত্যি তোমাদের কাছে তার চিহ্ন হল এই- তোমরা কাপড়ে জড়ানো এবং যাবপাত্রে শোয়ানো একটি শিশুকে দেখতে পাবে।”
13এই সময় সেই ফেরেশতার সংগে হঠাৎ সেখানে আরও অনেক ফেরেশতাকে দেখা গেল। তাঁরা আল্লাহ্র প্রশংসা করে বলতে লাগলেন,
14“বেহেশতে আল্লাহ্র প্রশংসা হোক,
দুনিয়াতে যাদের উপর তিনি সন্তুষ্ট
তাদের শান্তি হোক।”
15ফেরেশতারা তাদের কাছ থেকে বেহেশতে চলে যাবার পর রাখালেরা একে অন্যকে বলল, “চল, আমরা বেথেলহেমে যাই এবং যে ঘটনার কথা মাবুদ আমাদের জানালেন তা গিয়ে দেখি।”
16তারা তাড়াতাড়ি গিয়ে মরিয়ম, ইউসুফ ও যাবপাত্রে শোয়ানো সেই শিশুটিকে তালাশ করে বের করল। 17তাদের কাছে ঐ শিশুর বিষয়ে যা জানানো হয়েছিল, শিশুটিকে দেখবার পরে তারা তা বলল। 18রাখালদের কথা শুনে সবাই আশ্চর্য হল; 19কিন্তু মরিয়ম সব কিছু মনে গেঁথে রাখলেন, কাউকে বললেন না; তিনি সেই বিষয়ে চিন্তা করতে থাকলেন। 20ফেরেশতারা রাখালদের কাছে যা বলেছিলেন সব কিছু সেইমত দেখে ও শুনে তারা আল্লাহ্র প্রশংসা ও গৌরব করতে করতে ফিরে গেল।
ব্যাখ্যা
আল্লাহ খোলাভাবেই ঘোষণা করলেন তার পুত্রের জন্মের কথা। প্রথম তিনি যাদের কাছে এই আনন্দ সংবাদ প্রকাশ করলেন, তারা হলো অতি সাধারণ রাখাল যারা খোলা মাঠে তাদের ভেড়াদেরকে পাহারা দিচ্ছিল। তিনি বেহেস্ত থেকে এক ফেরেশতা কে পাঠালেন তাদেরকে এই খবর জানাতে। আরও একদল ফেরেশতা তাদের সামনে এসে আনন্দের সাথে ইবাদত বন্দেগী করলেন।
এরপর সেই রাখালগণ সেই গোয়ালঘরে গিয়ে ঠিক যেমন ফেরেশতা বলেছিলেন তেমন দেখলেন। তারা এত খুশি হলেন যে তারা সব জায়গায় গিয়ে বলতে লাগলেন যে তারা কি দেখেছেন ও শুনেছেন।
//////////