(JESUS TRIED IN COURT)
ইহুদী নেতাদের সভা বসলো
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—
মার্ক ১৪:১-২ উদ্ধার–ঈদ ও খামিহীন রুটির ঈদের তখন মাত্র আর দু’দিন বাকী। প্রধান ইমামেরা ও আলেমেরা গোপনে ঈসাকে ধরে হত্যা করবার উপায় খুঁজছিলেন। 2তাঁরা বললেন, “ঈদের সময়ে নয়; লোকদের মধ্যে গোলমাল হতে পারে।”
ব্যাখ্যা
রাজধানী জেরুজালেমের ইবাদতখানার ও অন্যান্য সব ইবাদতখানার প্রধান ছিলেন সবচেয়ে মহা ইমাম। অন্যান্য শীর্ষ স্থানীয় ইমামগণ ছিলেন তার সহকারী। লিপিকরেরা সংখ্যায় অনেক ছিলেন এবং তারা শিক্ষিত ধর্মীয় দল ছিলেন যারা যত্ন সহকারে আল্লাহর কিতাবগুলো অধ্যয়ন করতেন।
কিন্তু ইমাম বা লিপিকর কেউই আল্লাহর কালাম বুঝতে পারেন নি। কারণ আল্লাহর থেকে অধিক বেশি তারা তাদের নিজেদেরকে ভালোবাসতেন, তাই তারা কখনো আল্লাহর পাক রুহের প্রতি কর্ণপাত করেন নি যখন কালামের অর্থ তিনি তাদের বোঝাতে চেয়েছিলেন।
যে ভূল তারা করেছিল যে তারা আল্লাহর পুত্র ঈসার সম্পর্কে যে সকল ভবিষ্যতবাণী ছিল তা বুঝতে পারেননি, যে তিনি শুধু ইহুদীদেরকেই নয় দুনিয়ার অন্যান্য লোকদেরকেও শয়তান ও গুনাহের থেকে রক্ষা করবেন। তারা ভেবেছিল ঈসা শুধু তাদেরকেই রক্ষা করবে রোমান জাতির থেকে, যারা তখন তাদের শাসন করছিল। তারা তাকে একজন ভন্ড শিক্ষক বলে মনে করেছিলেন যিনি লোকদের বিভ্রান্ত করছেন এবং তাদের নেতৃত্বের আসন থেকে বহিস্কার করতে চাইছেন। তাই, তারা তাকে হত্যা করবার সিদ্ধান্ত নিল।
ঈসাকে বন্দী করা হলো
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—
মার্ক ১৪:৪৩-৫২ ঈসা তখনও কথা বলছেন, এমন সময় এহুদা সেখানে আসল। সে সেই বারোজন সাহাবীদের মধ্যে একজন ছিল। তার সংগে অনেক লোক ছোরা ও লাঠি নিয়ে আসল। প্রধান ইমামেরা, আলেমেরা ও বৃদ্ধ নেতারা এই লোকদের পাঠিয়েছিলেন।
44ঈসাকে যে ধরিয়ে দিয়েছিল সে ঐ লোকদের সংগে একটা চিহ্ন ঠিক করেছিল। সে বলেছিল, “যাকে আমি চুমু দেব, সে–ই সেই লোক। তোমরা তাকেই ধোরো এবং পাহারা দিয়ে নিয়ে যেয়ো।” 45তাই এহুদা সোজা ঈসার কাছে গিয়ে বলল, “হুজুর!” এই কথা বলেই সে তাঁকে চুমু দিল। 46তখন সেই লোকেরা ঈসাকে ধরল। 47যাঁরা ঈসার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন তাঁর ছোরা বের করলেন এবং মহা–ইমামের গোলামকে আঘাত করে তার একটা কান কেটে ফেললেন।
48ঈসা সেই লোকদের বললেন, “আমি কি ডাকাত যে, আপনারা ছোরা ও লাঠি নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছেন? 49আমি তো প্রত্যেক দিনই আপনাদের মধ্যে থেকে বায়তুল–মোকাদ্দসে শিক্ষা দিতাম, কিন্তু তখন তো আপনারা আমাকে ধরেন নি। অবশ্য কিতাবের কথা পূর্ণ হতে হবে।”
50সেই সময় সাহাবীরা সবাই তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। 51একজন যুবক কেবল একটা চাদর পরে ঈসার পিছনে পিছনে যাচ্ছিল। 52লোকেরা যখন তাকে ধরল তখন সে চাদরখানা ছেড়ে দিয়ে উলংগ অবস্থায় পালিয়ে গেল।
ব্যাখ্যা
তখন ছিল গভীর রাত। ঈসা তার সাহাবীদের সাথে গেৎশিমাণী নামক একটি বাগানে বাগানে ছিলেন। তিনি অনেক বেদনায় ভারাক্রান্ত ছিলেন কারণ তিনি জানতেন যে তাকে অত্যাচার করা হবে ও সলিবে তোলা হবে। তাই, তিনি তার পিতার নিকট প্রার্থনা করছিলেন যেন তিনি তাকে শক্তি দেন। তারপর সেখানে তরোয়াল ও বর্শা নিয়ে বড় একদল লোক এল। মহা ইমাম তাদেরকে পাঠিয়েছিলেন ঈসাকে গ্রেফতার করতে। ঈসার একজন সাহাবীও সেই লোকদের সাথে ছিল, যার নাম ছিল এহুদা। সে ঈসার সামনে এসে তাকে চুম্বন করলো তাদেরকে দেখাতে যে কাকে ধরতে হবে।
ঈসার আরেকজন সাহাবী, নাম পিতর, সে তাকে বাচাতে চেষ্টা করলো তার ছুরি দেখিয়ে। ঈসা পিতরকে বাধা দিলেন কারণ তিনি এই দুনিয়ায় আমাদের পাপের মূল্য দিতে এসেছেন তার রক্ত ও জীবন দানের মাধ্যমে। তাই তিনি সেই আঘাত প্রাপ্ত লোকের কান ভালো করে দিলেন মুহুর্তেই।
তারপর তিনি নিজেকে তাদের কাছে আত্বসমর্পণ করলেন এবং তারা তাকে বন্দী করে নিয়ে চলে গেল। তার সব সাহাবীগণ সেখান থেকে পালিয়ে গেলেন।
ঈসাকে প্রথমে ইমাম সভায় জেরা করা হল
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—
মার্ক ১৪:৫৩-৬৫ সেই লোকেরা ঈসাকে নিয়ে মহা–ইমামের কাছে গেল। সেখানে প্রধান ইমামেরা, বৃদ্ধ নেতারা ও আলেমেরা একসংগে জমায়েত হলেন। 54পিতর দূরে দূরে থেকে ঈসার পিছনে যেতে যেতে মহা–ইমামের উঠানে গিয়ে ঢুকলেন। সেখানে রক্ষীদের সংগে বসে তিনি আগুন পোহাতে লাগলেন। 55প্রধান ইমামেরা এবং মহাসভার সমস্ত লোকেরা ঈসাকে হত্যা করবার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যের খোঁজ করছিলেন, কিন্তু কোন সাক্ষ্যই তাঁরা পেলেন না। 56ঈসার বিরুদ্ধে অনেকেই মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছিল কিন্তু তাদের সাক্ষ্য মিলল না। 57তখন কয়েকজন উঠে তাঁর বিরুদ্ধে এই মিথ্যা সাক্ষ্য দিল, 58“আমরা ওকে বলতে শুনেছি, ‘মানুষের তৈরী এই এবাদত–খানা আমি ভেংগে ফেলব এবং তিন দিনের মধ্যে এমন একটা এবাদত–খানা তৈরী করব যা মানুষের তৈরী নয়।’ ” 59কিন্তু তবুও তাদের সাক্ষ্য মিলল না।
60তখন মহা–ইমাম সকলের সামনে দাঁড়িয়ে ঈসাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি কোন জবাবই দেবে না? তোমার বিরুদ্ধে এই লোকেরা এই সব কি সাক্ষ্য দিচ্ছে?” 61ঈসা কিন্তু জবাব না দিয়ে চুপ করেই রইলেন।
মহা–ইমাম আবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি গৌরবময় আল্লাহ্র পুত্র মসীহ্?”
62ঈসা বললেন, “আমিই সেই। আপনারা সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র ডান দিকে ইব্ন্তেআদমকে বসে থাকতে দেখবেন এবং আসমানের মেঘের সংগে আসতে দেখবেন।”
63এতে মহা–ইমাম তাঁর কাপড় ছিঁড়ে বললেন, “আর সাক্ষীর আমাদের কি দরকার? 64আপনারা তো শুনলেনই যে, ও কুফরী করল। আপনারা কি মনে করেন?”
তাঁরা সবাই ঈসাকে মৃত্যুর শাস্তি পাবার উপযুক্ত বলে স্থির করলেন। 65তখন কয়েকজন তাঁর গায়ে থুথু দিলেন এবং তাঁর মুখ ঢেকে তাঁকে ঘুষি মেরে বললেন, “তুই না নবী? কিছু বল্ দেখি!” তারপর রক্ষীরা তাঁকে নিয়ে গিয়ে চড় মারতে লাগল।
ব্যাখ্যা
ঈসাকে সেই ইমামদের সভায় নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে ইহুদী বিচারসভা বসলো, যেখানে মহা-ইমামের সাথে ইমাম, আলেম ও লিপিকররা উপস্থিত ছিলেন।
ঈসার বিরুদ্ধে শুনানি চালানোর জন্য সাক্ষী আনা হয়েছিল, যাদের ভাড়া করে আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য। তারা এমন কোন প্রমাণ দাড়া করতে পারলো না যা দিয়ে তাকে অপরাধী সাজিয়ে মৃত্যুদন্ড দিতে পারেন।
যখন তারা ঈসাকে জিজ্ঞেস করলেন ঈসা তাদের বললেন তিনিই আল্লাহর পুত্র। মহা ইমাম তার উত্তর সত্য বলে গ্রহন করতে পারলেন না এবং তাকে দোষী বলে আখ্যায়িত করলেন।
সেই বিচারসভা তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না, তাই তারা তাকে সেখানকার সরকারী আদালতে বিচারের জন্য নিয়ে গেল।
জনগনের আদলতে ঈসার বিচার হলো
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—
মার্ক ১৫:১-২০ 1প্রধান ইমামেরা খুব ভোরে বৃদ্ধ নেতাদের, আলেমদের ও মহাসভার সমস্ত লোকদের সংগে একটা পরামর্শ করলেন। তারপর তাঁরা ঈসাকে বেঁধে নিয়ে গিয়ে তাঁকে রোমীয় প্রধান শাসনকর্তা পীলাতের হাতে দিলেন। 2তখন পীলাত ঈসাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি ইহুদীদের বাদশাহ্?”
ঈসা জবাব দিলেন, “আপনি ঠিক কথাই বলছেন।”
3প্রধান ইমামেরা তাঁর নামে অনেক দোষ দিলেন। 4এতে পীলাত আবার ঈসাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি জবাব দেবে না? দেখ, তারা তোমাকে কত দোষ দিচ্ছে।”
5ঈসা কিন্তু আর কোন জবাবই দিলেন না। এতে পীলাত আশ্চর্য হলেন।
6উদ্ধার–ঈদের সময়ে লোকেরা যে কয়েদীকে চাইত পীলাত তাকে ছেড়ে দিতেন। 7সেই সময় বারাব্বা নামে একজন লোক জেলখানায় বন্দী ছিল। বিদ্রোহের সময় সে বিদ্রোহীদের সংগে থেকে খুন করেছিল। 8লোকেরা পীলাতের কাছে এসে বলল, “আপনি সব সময় যা করে থাকেন এখন তা–ই করুন।”
9পীলাত তাদের বললেন, “তোমরা কি চাও যে, আমি ইহুদীদের বাদশাহ্কে ছেড়ে দিই?” 10প্রধান ইমামেরা যে হিংসা করেই ঈসাকে তাঁর হাতে দিয়েছেন পীলাত তা জানতেন। 11কিন্তু প্রধান ইমামেরা লোকদের উস্কিয়েছিলেন যেন তারা ঈসার বদলে বারাব্বাকে চেয়ে নেয়।
12পীলাত আবার লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তাহলে তোমরা যাকে ইহুদীদের বাদশাহ্ বল তাকে নিয়ে আমি কি করব?”
13লোকেরা চেঁচিয়ে বলল, “ওকে ক্রুশে দিন।”
14পীলাত বললেন, “কেন, সে কি দোষ করেছে?”
কিন্তু লোকেরা আরও জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগল, “ওকে ক্রুশে দিন।”
15তখন পীলাত লোকদের সন্তুষ্ট করবার জন্য বারাব্বাকে তাদের কাছে ছেড়ে দিলেন, আর ঈসাকে ভীষণভাবে চাবুক মারবার হুকুম দিয়ে ক্রুশের উপরে হত্যা করবার জন্য দিলেন।
16তারপর সৈন্যেরা ঈসাকে নিয়ে প্রধান শাসনকর্তার বাড়ীর ভিতরে গেল। সেখানে তারা অন্য সব সৈন্যদের একত্র করল। 17তারা ঈসাকে বেগুনে কাপড় পরাল, আর কাঁটা–লতা দিয়ে একটা তাজ গেঁথে তাঁর মাথায় পরিয়ে দিল। 18তার পরে তারা ঈসাকে বলতে লাগল, “ইহুদী–রাজ, মারহাবা!”
19তারা একটা লাঠি দিয়ে ঈসার মাথায় বারবার মারতে লাগল এবং তাঁর গায়ে থুথু দিল, আর হাঁটু পেতে তাঁকে সম্মান দেখাবার ভান করল। 20এইভাবে তাঁকে ঠাট্টা–তামাশা করবার পর তারা সেই বেগুনে কাপড় খুলে নিয়ে তাঁকে তাঁর নিজের কাপড় পরিয়ে দিল এবং ক্রুশের উপরে হত্যা করবার জন্য নিয়ে চলল।
ব্যাখ্যা
বিচারকের নাম ছিল পীলাত। কিছুক্ষনের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারেন ঈসা পুরোপুরি নিষ্পাপ। তিনি উপলব্ধি করেন ইহুদী নেতারা তাকে হত্যা করতে চান কারণ তারা তাকে হিংসা করেন এবং ঘৃণা করেন।
তারপর তিনি তাকে মুক্ত করে দেওয়ার জন্য সকল চেষ্টা করেন। তাদের শান্ত করতে তিনি বারাব্বাস নামের একজন বন্দীকে ছেড়ে দেওয়ার সম্মতিও প্রদান করেন। তাদেরকে তিনি জিজ্ঞেস করেন কাকে তারা মুক্ত করতে চান- ঈসা না কি বারাব্বাস? তারা উত্তর দেয় বারাব্বাস।
যখন পীলাত দেখলেন যে তার কোন পরিকল্পনা কাজ করছে না, তখন তিনি সৈন্যদের আদেশ দিলেন ঈসাকে অনেক অত্যাচার করতে, তাহলে হয়তো ইহুদিরা খুশি হবে, কিন্তু তারা হলেন না। অবশেষে পীলাত বাধ্য হলেন সেনাদের আদেশ দিতে যেন তারা ঈসাকে সলিবে চড়ায়।
এভাবেই ঈসাকে চরম নির্যাতন করে, সলিবের উপর মৃত্যুবরণ করার আদেশ দেওয়া হয়।
//////////