ঈসার তরিকাবন্দী ও প্রলোভন

(JESUS’ BAPTISM AND TEMPTATION)

ঈসার তরিকাবন্দী

কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—

মথি ৩:১৩-১৭ সেই সময় ঈসা তরিকাবন্দী নেবার জন্য গালীল থেকে জর্ডান নদীর ধারে ইয়াহিয়ার কাছে আসলেন। 14ইয়াহিয়া কিন্তু তাঁকে এই কথা বলে বাধা দিতে চেষ্টা করলেন, “আমারই বরং আপনার কাছে তরিকাবন্দী নেওয়া দরকার; আর আপনি কিনা আসছেন আমার কাছে!”

15তখন ঈসা তাঁকে বললেন, “কিন্তু এবার এই রকমই হোক, কারণ আল্লাহ্‌র ইচ্ছা এইভাবেই আমাদের পূর্ণ করা উচিত।” তখন ইয়াহিয়া রাজী হলেন।

16তরিকাবন্দী নেবার পর ঈসা পানি থেকে উঠে আসবার সংগে সংগেই তাঁর সামনে আসমান খুলে গেল। তিনি আল্লাহ্‌র রূহ্‌কে কবুতরের মত হয়ে তাঁর উপরে নেমে আসতে দেখলেন। 17তখন বেহেশত থেকে বলা হল, “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, এঁর উপর আমি খুবই সন্তুষ্ট।”

তরিকাবন্দির বিষয়ে ব্যাখ্যা

এই দুনিয়ার অন্য সব শিশুর মতোই ঈসা বেড়ে উঠলেন, তিনি তার জাগতিক পিতার কাঠমিস্ত্রির কাজে সাহায্য করতেন। তার বয়স যখন ৩০ হলো তখন তিনি বাড়ী থেকে বেড়িয়ে এলেন সে কাজের জন্য যে কাজের জন্য তার পিতা আল্লাহ তাকে এই দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। কিন্তু প্রথমেই, তাকে তরিকাবন্দী নিতে হবে। এর অবশ্য দুটি কারণ ছিল—

  • প্রথমত, তাকে সবাইকে দেখতে হতো যে পিতা আল্লাহর নিকট তিনি সমর্পন করেছেন।
  • দ্বিতীয়ত, তার দুনিয়ার জীবনকালে, তিনি শুধু ঐশ্বরিক ছিলেন না, একই সাথে তিনি মানুষও ছিলেন তাই তার আল্লাহর পাক রুহের শক্তিলাভ করার প্রয়োজনও ছিল। এখানে তিনি আমাদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, আমরাও আল্লাহর জন্য বাচঁতে বা কাজ করতে পারি না যদি না আমরা আল্লাহর পাক রূহ দ্বারা পূর্ণ হতে না পারি।

তাই তিনি তরিকাবন্দীর জন্য ইয়াহিয়ার কাছে গেলেন যাকে আল্লাহ নিযুক্ত করেছিলেন মানুষকে অনুতাপ করার কথা প্রচার করবার জন্য। যারাই তাদের পাপের অনুতাপ করেছিল, তাদেরকে তিনি যর্দন নদীতে তরিকাবন্দী দিচ্ছিলেন। প্রথমে ইয়াহিয়া তাকে তরিকাবন্দী দিতে চাইছিলেন না কারণ ইয়াহিয়া একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন অন্যদিকে ঈসা ছিলেন আল্লাহর পুত্র এবং যিনি কখনো পাপ করেন নি। কিন্তু, ঈসা যখন জোর দিলেন তখন তিনি তাকে তরিকাবন্দী দিলেন।

তারপর, যখন ঈসা তরিকাবন্দী গ্রহন করে তার বাধ্যতা দেখালেন, তখন আল্লাহ দুটি বিষয় করলেনঃ

  • প্রথমত, তিনি পাক রুহ্‌ কে কবুতরের বেশে ঈসার কাছে যেন যে কাজ ঈসাকে করতে হবে তার জন্য তিনি প্রস্তুত হন।
  • দ্বিতীয়ত, তিনি বেহেস্ত থেকে জোরে পরিস্কারভাবে বললেন যেন সবাই শুনতে পারে যে, তিনিই তার প্রিয় পুত্র এবং তার উপর তিনি সম্পূর্ণভাবে সন্তুষ্ট।

বেহেস্তের তিনজনের সম্পর্কে ব্যাখ্যা

আমরা আগের অধ্যায়ে পড়েছি যেখানে আল্লাহ বলেছিলেনঃ

পয়দায়েশ ১:২৬ তারপর আল্লাহ্‌ বললেন, “আমরা আমাদের মত করে এবং আমাদের সংগে মিল রেখে এখন মানুষ তৈরী করি। তারা সমুদ্রের মাছ, আকাশের পাখী, পশু, বুকেহাঁটা প্রাণী এবং সমস্ত দুনিয়ার উপর রাজত্ব করুক।

“আমরা আমাদের মত করে….” কেন খোদা যখন নিজের সম্পর্কে বলছিলেন তখন “আমাদের” শব্দ ব্যবহার করেছেন যা একের অধিক ব্যাক্তি বুঝায় এবং আমরা দেখতে পাই সৃষ্টির শুরুতে সেখানে কেবলমাত্র একজন স্রষ্টা আল্লাহ ছিলেন।

এর উত্তর হল এই যে আল্লাহ একজন কিন্তু এই একজনের মধ্যে তিনজন ব্যাক্তি আছে যারা সমানভাবে আল্লাহ, কিন্তু প্রত্যেকে ভিন্ন কার্য সম্পাদন করে।

এটা কিছুটা একজন মানুষের বাড়ীর মতো যেখানে তিনজন ব্যক্তির একটি পরিবার বাস করে, যেখানে একজন পিতা, একজন মাতা ও একজন পুত্র, যারা একে অন্যের সাথে রক্তের সম্পর্কে আবদ্ধ এবং তাদের বংশ নাম একই। তারা তিনজনের প্রত্যেকেই সমানভাবে মানুষ; কেউ কারো থেকে বেশী বা কম মানুষ নন, কিন্তু পরিবারে এক একজন এক এক ভূমিকা পালন করে। 

আল্লাহর ঘরে তিনজন আল্লাহ ব্যক্তি নিম্নোক্ত ভূমিকা পালন করেঃ

  • পিতা আল্লাহ সমস্ত কিছু পরিকল্পনা করেন যা যা হবে। তিনি কোন সময় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে ও কার দ্বারা হবে তাও নির্ধারণ করেন।
  • পুত্র ঈসা একজন মধ্যস্থতাকারী, তিনি মাঝের ব্যক্তি, যিনি সব কার্যের তত্ত্বাবধান করেন এবং নিজেই কিছু কিছু কার্য সম্পাদন করেন।
  • আল্লাহর পাক রুহ এমন একজন ব্যক্তি যার হাত সমস্ত কার্য সম্পাদনে থাকে, যে কার্য পিতা আল্লাহ্‌ পরিকল্পনা করেন ও পুত্র তত্ত্বাবধান করেন।

সব জাগতিক পরিবারের সাথে তাদের পার্থক্য এই যে, যে তিনজনের পরিবারে প্রত্যেকে বাড়ী থেকে বের হয়ে যেদিকে খুশি সেদিকে যেতে পারে, অন্যদিকে, আল্লাহ্‌ যিনি একজনই, যার মধ্য তিন ব্যক্তি স্বত্তা রয়েছে যারা কখনো আলাদা হত বা থাকতে পারেন না। 

তাওরাত, জবুর শরীফ ও নবীদের কিতাবে আল্লাহর এই তিন স্বত্তা নিয়ে বেশি পরিস্কারভাবে বর্ণনা করা হয় নি, কিন্তু ইঞ্জিল শরীফে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনেক আলোকপাত করা হয়েছে।

কিতাব এর যে অংশ আমরা পাঠ করেছি সেখানে এই তিন ব্যক্তির নাম নেওয়া হয়েছেঃ

  • পুত্র ঈসা যখন তরিকাবন্দী নিলেন।
  • তিনি আল্লাহর সাক্ষাতে তরিকাবন্দী নিলেন, তখন পাক রুহ্‌ কবুতরের বেশে তার উপর নেমে আসলেন এবং
  • আল্লাহ যিনি পিতা তিনি এটা নিশ্চিত করে বললেন ঈসা তার প্রিয় পুত্র।

ইবলিস ঈসাকে প্রলোভিত করলো

কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—-

মথি ৪:১-১১ এর পরে পাকরূহ্ঈসাকে মরুভূমিতে নিয়ে গেলেন যেন ইবলিস ঈসাকে লোভ দেখিয়ে গুনাহে ফেলবার চেষ্টা করতে পারে 2সেখানে চল্লিশ দিন চল্লিশ রাত রোজা রাখবার পর ঈসার খিদে পেল 3তখন শয়তান এসে তাঁকে বলল, “তুমি যদি ইব্নুল্লাহ্হও তবে এই পাথরগুলোকে রুটি হয়ে যেতে বল” 4ঈসা জবাবে বললেন, “পাককিতাবে লেখা আছে, মানুষ কেবল রুটিতেই বাঁচে না, কিন্তু আল্লাহ্ মুখের প্রত্যেকটি কালামেই বাঁচে।” 5তখন ইবলিস ঈসাকে পবিত্র শহর জেরুজালেমে নিয়ে গেল এবং বায়তুলমোকাদ্দসের চূড়ার উপর তাঁকে দাঁড় করিয়ে বলল, 6“তুমি যদি ইব্নুল্লাহ্হও তবে লাফ দিয়ে নীচে পড়, কারণ পাককিতাবে লেখা আছে, আল্লাহ্তাঁর ফেরেশতাদের তোমার বিষয়ে হুকুম দেবেন; তাঁরা তোমাকে হাত দিয়ে ধরে ফেলবেন যাতে তোমার পায়ে পাথরের আঘাত না লাগে।” 7ঈসা ইবলিসকে বললেন, “আবার এই কথাও লেখা আছে, তোমার মাবুদ আল্লাহ্কে তুমি পরীক্ষা করতে যেয়ো না।” 8তখন ইবলিস আবার তাঁকে খুব উঁচু একটা পাহাড়ে নিয়ে গেল এবং দুনিয়ার সমস্ত রাজ্য তাঁদের জাঁকজমক দেখিয়ে বলল, 9“তুমি যদি মাটিতে পড়ে আমাকে সেজদা কর তবে এই সবই আমি তোমাকে দেব।” 10তখন ঈসা তাকে বললেন, “দূর হও, শয়তান। পাককিতাবে লেখা আছে, তুমি তোমার মাবুদ আল্লাহ্কেই ভয় করবে, কেবল তাঁরই এবাদত করবে।” 11তখন ইবলিস তাঁকে ছেড়ে চলে গেল, আর ফেরেশতারা এসে তাঁর সেবা করতে লাগলেন

ব্যাখ্যা

পুর্বের অধ্যায়গুলোতে আমরা দেখেছি দুনিয়ার প্রথম দুই মানুষ কিভাবে ইবলিশ বা শয়তানের দ্বারা প্রলোভিত হয়েছিলেন এবং পাপ করেছিলেন। তারপর থেকেই সব জাতি ও ধর্মের প্রত্যেক মানুষই শয়তানের দ্বারা প্রলোভিত হয়েছে আল্লাহর অবাধ্য হবার জন্য এবং বার বার পাপ করার জন্য।

ঈসা হলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি শয়তানকে প্রতিরোধ করতে সফল হয়েছিলেন, এবং এমনকি ধারাবাহিকভাবে তিনবার শয়তানকে পরাজিত করেছিলেন। এই দুনিয়ায় তার জীবতকালে তিনি একটাও গুনাহ করেননি, এবং প্রমাণ করেছিলেন তিনিও আল্লাহ্‌, কারণ একমাত্র আল্লাহই আত্বার দিক থেকে ও নৈতিক দিক থেকে সম্পূর্ণ নিখুত এবং ইবলিশ কে প্রতিরোধ করতে তিনি সক্ষম।

শয়তানের বিরুদ্ধে জয়লাভের পরে, তিনি প্রস্তুত হলেন অন্য সকল মানুষের কাছে যাওয়ার জন্য, তাদের এই প্রত্যাশা দিতে যে এখন তারাও শয়তানের ফাদ থেকে বের হতে পারবে। ঈসা এখন যাচ্ছেন সর্পের মস্তক চূর্ন করতে ঠিক যে ওয়াদা আল্লাহ্‌ আদম ও হাওয়ার কাছে করেছিলেন।

//////////