(JESUS’S CRUXIFIXION, RESURRECTION AND ASCENSION)
সলিবের উপর ঈসার মৃত্যু
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—
মার্ক ১৫:২১-৪০ সেই সময় শিমোন নামে কূরীণী শহরের একজন লোক গ্রামের দিক থেকে এসে সেই পথে যাচ্ছিলেন। ইনি ছিলেন আলেকজাণ্ডার ও রূফের পিতা। সৈন্যেরা তাঁকে ঈসার ক্রুশটা বয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করল। 22তারা ঈসাকে গল্গথা, অর্থাৎ মাথার খুলির স্থান নামে একটা জায়গায় নিয়ে গেল। 23পরে তারা ঈসাকে গন্ধরস মিশানো সিরকা খেতে দিল, কিন্তু তিনি তা খেলেন না। 24এর পরে তারা ঈসাকে ক্রুশে দিল। সৈন্যেরা তাঁর কাপড়-চোপড় ভাগ করবার জন্য গুলিবাঁট করে দেখতে চাইল কার ভাগ্যে কি পড়ে।
25সকাল ন’টার সময় তারা তাঁকে ক্রুশে দিয়েছিল। 26ঈসার বিরুদ্ধে দোষ-নামাতে লেখা ছিল, “ইহুদীদের বাদশাহ্।” 27তারা দু’জন ডাকাতকেও ঈসার সংগে ক্রুশে দিল, একজনকে ডান দিকে ও অন্যজনকে বাঁ দিকে। 28তাতে পাক-কিতাবের এই কথা পূর্ণ হল: “তাঁকে অন্যায়কারীদের সংগে গোণা হল।”
29যারা সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল তারা মাথা নেড়ে ঈসাকে ঠাট্টা করে বলল, “ওহে, তুমি না বায়তুল-মোকাদ্দস ভেংগে আবার তিন দিনের মধ্যে তা তৈরী করতে পার! 30এখন ক্রুশ থেকে নেমে এসে নিজেকে রক্ষা কর!”
31প্রধান ইমামেরা ও আলেমেরাও ঈসাকে ঠাট্টা করবার উদ্দেশ্যে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন, “ও অন্যদের রক্ষা করত, নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। 32ঐ যে মসীহ্, বনি-ইসরাইলদের বাদশাহ্! ক্রুশ থেকে ও নেমে আসুক যেন আমরা দেখে ঈমান আনতে পারি।”
ঈসার সংগে যাদের ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল তারাও তাঁকে টিট্কারি দিল।
হযরত ঈসা মসীহের মৃত্য
33পরে দুপুর বারোটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত সারা দেশ অন্ধকার হয়ে রইল। 34বেলা তিনটার সময় ঈসা জোরে চিৎকার করে বললেন, “এলোই, এলোই, লামা শবক্তানী,” অর্থাৎ “আল্লাহ্ আমার, আল্লাহ্ আমার, কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করেছ?”
35যারা কাছে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের কয়েকজন এই কথা শুনে বলল, “শোন, শোন, ও নবী ইলিয়াসকে ডাকছে।”
36তখন একজন লোক দৌড়ে গিয়ে একটা সপঞ্জ সিরকায় ভিজাল এবং একটা লাঠির মাথায় লাগিয়ে তা ঈসাকে খেতে দিল।
সে বলল, “থাক্, দেখি ইলিয়াস ওকে নামিয়ে নিতে আসেন কি না।”
37এর পরে ঈসা জোরে চিৎকার করে প্রাণত্যাগ করলেন। 38তখন বায়তুল-মোকাদ্দসের পর্দাটা উপর থেকে নীচ পর্যন্ত চিরে দু’ভাগ হয়ে গেল। 39যে সেনাপতি ঈসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সে ঈসাকে এইভাবে মারা যেতে দেখে বলল, “সত্যিই ইনি ইব্নুল্লাহ্ ছিলেন।”
40কয়েকজন স্ত্রীলোক দূরে দাঁড়িয়ে এই সব দেখছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মগ্দলীনী মরিয়ম, দুই ইয়াকুবের মধ্যে ছোট ইয়াকুব ও ইউসুফের মা মরিয়ম আর শালোমী।
ইউহোন্না ১৯:৩০ ঈসা সেই সিরকা খাওয়ার পরে বললেন, “শেষ হয়েছে।” তারপর তিনি মাথা নীচু করে তাঁর রূহ্ সমর্পণ করলেন।
ব্যাখ্যা
এই ধরণের শাস্তিকে বলা হয় সলিব বা ক্রুশের উপর মৃত্যু। ঈসাকে একটা কাঠের তৈরী ক্রুশের উপর পেরেক গেথে কালভেরী নামক পাহাড়ের উপর টাঙ্গানো হয়। তার দুই হাত দুদিকে টেনে ধরে, মোটা লম্বা পেরেক হাতের তালুতে গাথা হয়। ওনার পায়েও পেরেক গাথা হয়। তাকে অসহ্য যন্ত্রণা ও তৃষ্ণার কষ্ট ভোগ করতে হয়েছিল।
অনেক দর্শক তাকে টিটকারী দিয়েছিল কারণ তাকে দেখে ক্ষমতাহীন মনে হয়েছিল। সবচেয়ে কষ্টকর হলো, তার মনে হয়েছিল যে আল্লাহ্, তার বেহেস্তী পিতা তার সাথে ছিল না। তাই তিনি কেদে উঠে বলেছিলেন “আল্লাহ্ আমার, আল্লাহ্ আমার, কেন তুমি আমাকে ত্যাগ করেছ?”
তার পিতা দেখেছিলেন মানবসভ্যতার কত জঘন্য অসংখ্য পাপ তার পুত্রের মধ্যে এসেছিল। এটা তার জন্যও ছিল অসহ্য, তাই তিনি সেখান থেকে তার মুখ সরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু তার পুত্রের থেকে তিনি তার শক্তি তুলে নেন নি।
ঈসা চাইলেই সেই সলিব থেকে নেমে আসতে পারতেন কারণ সেই শক্তি তার মধ্যে ছিল এবং তার ফেরেশতাদের বলে এক ফু দিয়েই এই পৃথিবীর স মানুষকে মেরে ফেলতে পারতেন, কিন্তু তার আমাদের প্রতি ভালোবাসা ছিল তাই তিনি আমাদের গুনাহের সকল শাস্তি সম্পূর্নরূপে নিলেন এবং আমাদের পাপের লজ্জাও তিনি তার কাধে নিলেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি চিৎকার করে কেদে বললেন, “শেষ হয়েছে”।
এর অর্থ হলো তার পিতা তাকে যা যা করতে পাঠিয়েছিলেন তার সবই তিনি করেছেন। তিনি মানুষের গুনাহের সম্পূর্ন মূল্য পরিশোধ করেছেন। সুতরাং, আর কোন মানুষকেই তার পাপের জন্য ভেড়া বা গরু বা অন্য কোন পশু কোরবানী দিতে হবে না।
এই সময় জেরুজালেমের আল্লাহর ইবাদত ঘরে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা হলো। একটা পর্দা দিয়ে ইবাদতখানার একটা ছোট অংশ ঢাকা ছিল। সেই পর্দার পেছনে ছিল “সাক্ষ্য সিন্দুক” যা ছিল একটা কাঠের বাক্স। দুজন ফেরেস্তার পাখনা মেলা অবস্থার সোনার মূর্তি তার উপর লাগানো আছে। এই বাক্সের ভিতরে আছে দুটি পাথরের ফলক যার উপর আল্লাহর দশ হুকুম লেখা আছে যা হযরত মূসা পর্বতে আল্লাহর কাছ থেকে পেয়েছিলেন। এই বাক্স ছিল খুবই পবিত্র।
শুধুমাত্র মহা ইমাম সেই পর্দার পিছনের ঘরে যেতে পারতেন, বছরে মাত্র একবার, জাতির পাপের জন্য সেই সিন্দুকের উপর রক্ত ছেটাতে। ঈসা খন চিৎকার করে কেদে উঠলেন “শেষ হয়েছে” তখন সেই পর্দা অদৃশ্য হাতের দ্বারা উপর থেকে নীচ পর্যন্ত দু ভাগ হয়ে গেল। আল্লাহই এটা করলেন সব মানুষকে দেখাতে যে, এখন থেকে গুনাহের জন্য অনুতাপ করতে আল্লাহর সান্নিদ্ধে আর কাউ কে ভয় বা লজ্জা পেতে হবে না কারন তাদের গুনাহের জন্য ঈসা সম্পূর্ন শাস্তি পেয়েছেন। এখন আর আল্লাহর সাথে কথা বলতে আমাদের আর কোন ইমামের সাহায্যর প্রয়োজন নেই।
যে জায়গায় ঈসার দেহ সহ ক্রুশ ছিল, সেখানেও একটা ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। সেনাদের প্রধান যিনিও অন্যদের সাথে মিলে ঈসাকে টিটকারি দিয়েছিলেন, তারপর বুঝতে পেরেছিলেন ঈসা সত্যিই ছিল আল্লাহর পুত্র।
ঈসাকে সমাহিত করা হলো
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—
মার্ক ১৫:৪২-৪৭ সেই দিনটা ছিল আয়োজনের দিন, অর্থাৎ বিশ্রামবারের আগের দিন। 43যখন সন্ধ্যা হয়ে আসল তখন অরিমাথিয়া গ্রামের ইউসুফ সাহস করে পীলাতের কাছে গিয়ে ঈসার লাশটি চাইলেন। তিনি মহাসভার একজন নাম–করা সদস্য ছিলেন এবং তিনি নিজে আল্লাহ্র রাজ্যের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। 44পীলাত আশ্চর্য হলেন যে, ঈসা এত তাড়াতাড়ি মারা গেছেন। সত্যি সত্যি ঈসার মৃত্যু হয়েছে কি না, তা সেনাপতিকে ডেকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন। 45যখন সেনাপতির কাছ থেকে তিনি জানতে পারলেন যে, সত্যিই তাঁর মৃত্যু হয়েছে তখন লাশটি ইউসুফকে দিলেন। 46ইউসুফ গিয়ে কাপড় কিনে আনলেন এবং ঈসার লাশটি নামিয়ে সেই কাপড়ে জড়ালেন, আর পাহাড় কেটে তৈরী করা একটা কবরে সেই লাশটি রাখলেন। তারপর তিনি কবরের মুখে একটা পাথর গড়িয়ে দিলেন। 47ঈসার লাশটি কোথায় রাখা হল তা মগ্দলীনী মরিয়ম ও ইউসুফের মা মরিয়ম দেখলেন।
ব্যাখ্যা
মাবুদ আল্লাহ্ তখনকার প্রত্যেকটি ঘটনা যত্ন সহকারে পর্যালোচনা করছিলেন। তার পুত্র কবর থেকে উঠে আসবেন এবং তিনি চাইছিলেন সারা দুনিয়া যেন এই ঘটনা জানতে পারে যেন তারাও ঈসার উপর ঈমান আনতে পারে এবং নাজাত লাভ করতে পারে। তাই তিনি চাননি রোমান সৈন্যরা তার দেহ মাটিতে কবর দিয়ে, মাটি দিয়ে ঢেকে দিক। তাই তিনি ইউসুফ নামের এক ধনী ব্যক্তি যিনি গোপনে ঈসার উপর ঈমান এনেছিলেন, তার অন্তরে এই বাসনা দিলেন যেন ঈসাকে পাথরের কবরে সমাহিত করেন, যে কবর তিনি নিজের জন্য কিনে রেখেছিলেন। গুহার মতো সেই কবরের প্রবেশ পথে একটা বড় পাথর ছিল যা গড়িয়ে নিয়ে কবরের প্রবেশ পথ ঢাকা হতো। ঈসাকে সমাহিত করবার সময় ঈসার অন্যান্য কয়েকজন অনুসারী সেখানে ছিলেন।
কবর থেকে ঈসা পুনরুত্থিত হলেন
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—
মার্ক ১৬:১-১৮ বিশ্রামবার পার হয়ে গেলে পর মগ্দলীনী মরিয়ম, ইয়াকুবের মা মরিয়ম এবং শালোমী ঈসার লাশে মাখাবার জন্য খোশবু মলম কিনে আনলেন। 2সপ্তার প্রথম দিনের খুব সকালে, সূর্য উঠবার সংগে সংগেই তাঁরা কবরের কাছে গেলেন। 3সেই সময় তাঁরা একে অন্যকে জিজ্ঞাসা করছিলেন, “কবরের মুখ থেকে কে ঐ পাথরটা সরিয়ে দেবে?”
4কিন্তু তাঁরা চেয়ে দেখলেন যে, পাথরখানা সরানো হয়েছে। সেই পাথরটা খুব বড় ছিল। 5কবরের গুহায় ঢুকে তাঁরা দেখলেন, সাদা কাপড়-পরা একজন যুবক ডান দিকে বসে আছেন। এতে তাঁরা খুব অবাক হলেন। 6সেই যুবকটি বললেন, “অবাক হয়ো না। নাসরত গ্রামের ঈসা, যাঁকে ক্রুশের উপরে হত্যা করা হয়েছিল, তাঁকেই তোমরা খুঁজছো তো? তিনি এখানে নেই, তিনি জীবিত হয়ে উঠেছেন। যেখানে তারা তাঁকে রেখেছিল সেই জায়গা দেখ। 7তারপর তোমরা গিয়ে তাঁর সাহাবীদের ও পিতরকে এই কথা বল যে, তিনি তাদের আগে গালীলে যাচ্ছেন। তিনি যেমন বলেছিলেন তেমনই তারা তাঁকে সেখানে দেখতে পাবে।”
8সেই স্ত্রীলোকেরা কিছু বুঝতে না পেরে কাঁপতে কাঁপতে কবরের গুহা থেকে বের হয়ে আসলেন এবং সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে গেলেন। তাঁরা এত ভয় পেয়েছিলেন যে, কাউকে কিছু বললেন না।
9সপ্তার প্রথম দিনের ভোর বেলায় ঈসা মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠলেন। পরে তিনি মগ্দলীনী মরিয়মকে প্রথমে দেখা দিলেন। এই মরিয়মের ভিতর থেকে ঈসা সাতটা ভূত ছাড়িয়েছিলেন। 10তাঁকে দেখবার পর মরিয়ম গিয়ে যাঁরা ঈসার সংগে থাকতেন তাঁদের কাছে খবর দিলেন। সেই সময় তাঁরা মনের দুঃখে কাঁদছিলেন। 11ঈসা জীবিত হয়েছেন ও মরিয়ম তাঁকে দেখেছেন, এই কথা শুনে তাঁরা বিশ্বাস করলেন না।
12এর পরে তাঁর দু’জন সাহাবী যখন হেঁটে গ্রামের দিক যাচ্ছিলেন তখন ঈসা অন্য রকম চেহারায় তাঁদের দেখা দিলেন। 13তাঁরা ফিরে গিয়ে বাকী সবাইকে সেই খবর দিলেন, কিন্তু তাঁদের কথাও অন্য সাহাবীরা বিশ্বাস করলেন না।
14এর পরে ঈসা তাঁর এগারোজন সাহাবীকে দেখা দিলেন। তখন তাঁরা খাচ্ছিলেন। বিশ্বাসের অভাব ও অন্তরের কঠিনতার জন্য তিনি তাঁদের বকলেন, কারণ তিনি মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবার পরে যাঁরা তাঁকে দেখেছিলেন তাঁদের কথা তাঁরা বিশ্বাস করেন নি। 15ঈসা সেই সাহাবীদের বললেন, “তোমরা দুনিয়ার সব জায়গায় যাও এবং সব লোকদের কাছে আল্লাহ্র দেওয়া সুসংবাদ তবলিগ কর। 16যে কেউ ঈমান আনে এবং তরিকাবন্দী নেয় সে-ই নাজাত পাবে; কিন্তু যে ঈমান আনে না আল্লাহ্ তাঁকে দোষী বলে স্থির করে শাস্তি দেবেন। 17যারা ঈমান আনে তাদের মধ্যে এই চিহ্নগুলো দেখা যাবে- আমার নামে তারা ভূত ছাড়াবে, তারা নতুন নতুন ভাষায় কথা বলবে, 18তারা হাতে করে সাপ তুলে ধরবে, যদি তারা ভীষণ বিষাক্ত কিছু খায় তবে তাদের কোন ক্ষতি হবে না, আর তারা রোগীদের গায়ে হাত দিলে রোগীরা ভাল হবে।”
ব্যাখ্যা
যে তিন বছর ঈসা ইহুদী মানুষদের মধ্যে প্রচার ও পরিচর্যা কাজ করেছেন সে তিন বছরে, ঈসা মহা মহা আশ্চর্য সব কাজ করছিলেন, তিনি এমনকি মৃতকেও জীবিত করে তুলেছিলন। ইসার সকল সাহাবীগণ ও তাদের সাথে সাথে কিছু মহিলারাও ঈসার কথা শুনবার জন্য তার পিছু নিতেন, তারা সবাই ঈসাকে ভালোবাসতেন, কিন্তু তাদের মধ্যে কেউই এটা বিশ্বাস করতে পারেন নি যে ঈসা মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবেন, যে প্রতীজ্ঞা তিনি করেছিলেন। তাই পরেরদিন তারা আতর ও সুগন্ধি তেল নিয়ে কবরে গেলেন তার লাশের গায়ে মাখাতে।
সেখানে পৌছে তারা হতভম্ব হয়ে গেল কারণ কবরের পাথর মুখ থেকে সরানো ছিল। কবরের ভিতরে ঢুকে তারা হতবাক হয়ে গেল যখন ভেতরে তারা একজন ফেরেশতা দেখতে পেল, তিনি তাদের বললেন ঈসা জীবিত হয়েছেন এবং তিনি তাদের আদেশ দিলেন যেন এই খবর তারা সব সাহাবিদের দেয়।
সর্ব প্রথম যে মানুষটিকে ঈসা দেখা দিলেন, তিনি ছিলেন একজন মহিলা, তার নাম মগ্দলীনী মরিয়ম। তখন মরিয়ম কবরের পাশে কাদছিলেন যখন ঈসা তার সাথে কথা বলেছিলেন, তিনি ঈসাকে প্রথমে বাগানের মালী বলে মনে করেছিলেন। যখন ঈসা তার নাম ধরে ডাকলেন তখন তার কন্ঠস্বর তিনি চিনতে পারলেন।
তারপর ঈসা আরও কয়েকজনকে দেখা দিলেন এবং সন্ধ্যার দিকে তার সাহাবীদের দলকেও তিনি দেখা দিলেন। তিনি তাদেরকে তিরস্কার করলেন কারণ তারা বিশ্বাস করছিলেন না যে তিনি আবার জীবিত হয়েছেন। তারপরে ঈসা তাদেরকে আদেশ দিলেন যেন তারা সারা দুনিয়াতে যায় এবং সব মানুষের কাছে প্রচার করে ঈসার সুখবর। যারা এই সুখবর শুনে তার নামে বিশ্বাস করে এবং তরিকাবন্দী নেবে, তারা নাজাত পাবে, কিন্তু যারা বিশ্বাস করবে না, তারা দোষী হবে।
যদি পিতা আল্লাহ্ বেহেস্ত ও দুনিয়া সৃষ্টি করতে পারেন, তবে কেন মানুষের এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে, কেন তিনি তার পুত্রকে মৃত্যু থেকে জীবিত করতে পারবেন না? এর যে কারণ ঈসা আমাদের বলেছেন যে, আমরা আমাদের হৃদয় কঠিন করে রেখেছি, যার অর্থ হলো এই যে, যে আল্লাহকে আমরা দেখতে পাইনা তার থেকেও বেশি আমরা আমাদের নিজেদেরকে ও আমাদের চারপাশের মানুষকে বেশি বিশ্বাস করতে পছন্দ করি।
আসুন দুটি উদাহরণ দেখি। একজন মানুষ একজন ডাক্তারকে ঠিকই বিশ্বাস করে যাকে তিনি একদমই চিনেন না, এবং সেই ডাক্তার তাকে গভীর ঘুমে অচেতন করেন, তার বুকে অস্ত্রপ্রচার করে তার হৃৎপিণ্ড বের করে তা ঠিক করে পুনরায় তা আগের জায়গায় রেখে দেন, এভাবেই ডাক্তার তার জীবন বাচান। কিন্তু সেই একই লোক ঈসাকে বিশ্বাস করতে চান না যিনি তাকে নাজাত দিয়ে অনন্ত জীবন দিতে পারেন।
অথবা, আরেকজন মানুষের কথা চিন্তা করুন যিনি একটা প্লেনে বসে আছেন এবং যে পাইলটের উপর ভরসা করে বসে আছেন তাকে তিনি কখনো দেখেন নি, তাকে পাইলট মাটি থেকে হাজার ফিট উপরে নিয়ে অনেক দূরের কোন এয়ারপোর্টে পৌছে দেন, সেই পাইলটকে তিনি কত সহজেই বিশ্বাস করেন কিন্তু সেই অদেখা পাক রুহ্ যিনি তার জীবন সুন্দর করতে পারেন, আল্লাহর পথে চালিত করতে পারেন, বাধ্য থাকার সক্ষমতা দিয়ে জীবনকে বেহেস্তী রাজ্যের যোগ্য করতে পারেন, সেই পাক রুহ্কে বিশ্বাস করতে পারেন না।
এমন অবিশ্বাসী আচরণ ঈসা একদমই প্রশ্রয় দেন না, তিনি এদেরকে দোষী করেন।
ঈসার বেহেস্তে গমন ও আবার ফিরে আসার প্রতীজ্ঞা
কিতাবুল মোকাদ্দসে কেখা আছে—
মার্ক ১৬:১৯-২০ সাহাবীদের কাছে এই সব কথা বলবার পরে হযরত ঈসাকে বেহেশতে তুলে নেওয়া হল। সেখানে তিনি আল্লাহ্র ডান দিকে বসলেন। 20পরে সাহাবীরা গিয়ে সব জায়গায় তবলিগ করতে লাগলেন। হযরত ঈসা তাঁদের মধ্য দিয়ে তাঁদের সংগে কাজ করতে থাকলেন এবং তাঁদের অলৌকিক কাজ করবার শক্তি দিয়ে প্রমাণ করলেন যে, তাঁরা যা তবলিগ করছেন তা সত্যি।
প্রেরিত ১:১-৫ মাননীয় থিয়ফিল, ঈসাকে বেহেশতে তুলে নেবার আগে পর্যন্ত তিনি যা করেছিলেন ও শিক্ষা দিয়েছিলেন তার সমস্তই আমি আমার আগের কিতাবে লিখেছি। যে সাহাবীদের তিনি বেছে নিয়েছিলেন, তাঁকে তুলে নেবার আগে সেই সাহাবীদের তিনি পাক–রূহের মধ্য দিয়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন। 3তাঁর দুঃখভোগের পরে এই লোকদের কাছে তিনি দেখা দিয়েছিলেন এবং তিনি যে জীবিত আছেন তার অনেক বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দিয়েছিলেন। চল্লিশ দিন পর্যন্ত তিনি সাহাবীদের দেখা দিয়ে আল্লাহর রাজ্যের বিষয় বলেছিলেন। 4সেই সময় একদিন ঈসা যখন সাহাবীদের সংগে ছিলেন তখন তাঁদের এই হুকুম দিয়েছিলেন, “তোমরা জেরুজালেম ছেড়ে যেয়ো না, বরং আমার পিতার ওয়াদা করা যে দানের কথা তোমরা আমার কাছে শুনেছ তার জন্য অপেক্ষা কর। 5ইয়াহিয়া পানিতে তরিকাবন্দী দিতেন, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে পিতার সেই ওয়াদা অনুসারে পাক–রূহে তোমাদের তরিকাবন্দী হবে।”
আল্লাহর পাক রুহের বিষয়ে ওয়াদা
Act ১:৬-১৪ পরে সাহাবীরা একসংগে মিলিত হয়ে ঈসাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “প্রভু, এই সময় কি আপনি বনি–ইসরাইলদের হাতে রাজ্য ফিরিয়ে দেবেন?”
7ঈসা তাঁদের বললেন, “যে দিন বা সময় পিতা নিজের অধিকারের মধ্যে রেখেছেন তা তোমাদের জানতে দেওয়া হয় নি। 8তবে পাক–রূহ্ তোমাদের উপরে আসলে পর তোমরা শক্তি পাবে, আর জেরুজালেম, সারা এহুদিয়া ও সামেরিয়া প্রদেশে এবং দুনিয়ার শেষ সীমা পর্যন্ত তোমরা আমার সাক্ষী হবে।”
9এই কথা বলবার পরে সাহাবীদের চোখের সামনেই ঈসাকে তুলে নেওয়া হল এবং তিনি একটা মেঘের আড়ালে চলে গেলেন। 10ঈসা যখন উপরে উঠে যাচ্ছিলেন তখন সাহাবীরা একদৃষ্টে আসমানের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। এমন সময় সাদা কাপড় পরা দু’জন লোক সাহাবীদের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, 11“গালীলের লোকেরা, এখানে দাঁড়িয়ে আসমানের দিকে তাকিয়ে রয়েছ কেন? যাঁকে তোমাদের কাছ থেকে তুলে নেওয়া হল সেই ঈসাকে যেভাবে তোমরা বেহেশতে যেতে দেখলে সেইভাবেই তিনি ফিরে আসবেন।”
12 তখন সাহাবীরা জৈতুন পাহাড় থেকে জেরুজালেমে ফিরে আসলেন। জেরুজালেম শহর থেকে এই পাহাড়টা এক কিলোমিটার দূরে ছিল। 13 শহরে পৌঁছে তাঁরা উপরের তলার যে ঘরে তখন থাকতেন সেখানে গেলেন। এই সাহাবীদের নাম ছিল পিতর, ইউহোন্না, ইয়াকুব ও আন্দ্রিয়, ফিলিপ ও থোমা, বর্থলময় ও মথি, আলফেয়ের ছেলে ইয়াকুব ও মৌলবাদী শিমোন এবং ইয়াকুবের ছেলে এহুদা। 14তাঁরা সবাই ঈমানদার স্ত্রীলোকদের সংগে এবং ঈসার মা মরিয়ম ও তাঁর ভাইদের সংগে সব সময় একমন হয়ে মুনাজাত করতেন।
ব্যাখ্যা
কবর থেকে উঠার প্রে, আরও চল্লিশ দিন ঈসা দুনিয়ায় থাকলেন এবং তারপর বেহেস্তে ফিরে গেলেন।
এটা হলো দুনিয়ায় তার পরিচর্যা কাজের দ্বিতীয় অংশ। প্রথম অংশের পরিচর্যা কাজ মানুষের শারিরিক সীমাবদ্ধতা নিয়েই তিনি তা করেছেন কিন্তু দ্বিতীয় অংশে যেহেতু তিনি রুহানী স্বত্তা তাই সারা দেশেই তিনি বিভিন্ন জায়গায় দেখ দিয়েছেন।
দূরত্ব বা বন্ধ দরজা কোন কিছুই তাকে আটকাতে পারতো না, কোন মানুষই, এমনকি শয়তানও তাকে বাধা দিতে পারতো না।
হাজার হাজার লোক তাকে দেখেছিল যখন তিনি মানব শরীর নিয়ে পরিচর্যা কাজ করেছেন, কিন্তু তাদের এটা বিশ্বাস করতে তখন কষ্ট হয়েছিল যে তিনি নিজেই আল্লাহ্ যিনি স্বয়ং এসেছেন তাদের সাথে থাকতে।
এখন তিনি তাদের মধ্য থেকে কয়েক শত মানুষকে দেখা দিয়েছেন, একবার একসাথে ৫০০ মানুষকে দেখা দিয়েছেন, এবং তাদের সন্দেহ দূর করেছেন যে তিনিই সেই একই ব্যক্তি, আল্লাহর একমাত্র পুত্র।
তিনি তাদেরকে তখন ভবিষ্যতের দিশাও দিলেন। তাদেরকে জেরুজালেমে অপেক্ষা হয়েছিল যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা পাক রুহের তরিকাবন্দী পায়, ঠিক যেমন তিনি তরিকাবন্দী পেয়েছিলেন আল্লাহর কাজ শুরু করবার আগে। পাক রুহ্ তাদের রুহানী শক্তিকে দৃঢ় করবে যেন সারা পৃথিবীর কাছে তার ঈসার সাক্ষ্য বহণ করতে পারে।
তারপর তিনি মেঘে চড়ে বেহেস্তে গমন করলেন। যখন সাহাবীগণ তাকে উপরে উঠে যেতে দেখলেন, হয়তো তারাও তার সাথে যেতে চাচ্ছিলেন, সেখানে সাদা পোশাকে দুইজন (ফেরেশতা) ছিলেন যাদের আল্লাহ্ পাঠিয়েছিলেন তাদের সান্তনা দেওয়ার জন্য। তারা তাদের কাছে ওয়াদা করলেন যে মেঘে চড়ে এই দুনিয়ায় ঈসা আবার ফিরে আসবেন, ঠিক যেভাবে তিনি চলে গেলেন।
এই সুসংবাদ তাদেরকে তৃপ্তি দিল, এবং তারা তাদের জেরুজালেমের সেই ঘরে ফিরে গেলেন যেখানে তারা দিনের পর দিন একসাথে মুনাজাত করতে লাগলেন যেন তাদের উপরে পাক রুহ যে আসবে, যে ওয়াদা ঈসা করেছেন তা পূর্ণ হয়।
//////////