(HOW DID THE WORLD BEGIN?)
কিতাবুল মোকাদ্দসের লেখা রয়েছে—-
পয়দায়েশ ১: ১-২ সৃষ্টিরশুরুতেই আল্লাহ্ আসমান ও জমীন করলেন। 2 দুনিয়ার উপরটা তখনও কোন বিশেষ আকার পায় নি, আর তার মধ্যে জীবন্ত কিছুই ছিল না; তার উপরে ছিল অন্ধকারে ঢাকা গভীর পানি। আল্লাহ্র রূহ্ সেই পানির উপরে চলাফেরা করছিলেন।
ব্যাখ্যা
কিতাবের লেখা এই বলে শুরু হয় যে আল্লাহ কি কি সৃষ্টি করলেন, কিন্তু এখানে আল্লাহকে আমাদের সাথে এই বলে পরিচয় করানো হয়নি যে কোথা থেকে তিনি এসেছেন। যখন আমরা কিতাবুল মোকাদ্দস পড়তে থাকবো তখন আমরা আল্লাহর সম্পর্কে আরো অনেক কিছু আবিস্কার করবো। কিতাব আমাদের এটা ঠিকই বলে যে আল্লাহ চিরস্থায়ী, যার অর্থ হলো তার কোন শুরু বা শেষ নেই।
আমরা আয়াতে মাত্রই পড়লাম যে আল্লাহ নিজেকে প্রকাশ করছেন সবকিছুর মালিক হিসেবে। মালিক শব্দটি দিয়ে তিনি বলছেন যে সমস্ত কিছুর উপরে তাহার অবস্থান। কেবল মাত্র একজনই মালিক আছেন।
এখানে আরও আমরা দেখতে পাই তিনি তার কাজের মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করেছেন এবং যে কার্য তিনি করেছেন তা হলো তিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন, তাই আল্লাহ কে আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ বলে ডাকি।
তিনি আমাদের বলছেন যে তিনি আমাদের উপরে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি সৃষ্টি করেছেন (আসমান ও নক্ষত্রগুলো) এবং যা কিছু আমাদের চারপাশে ও পায়ের নীচে আছে (দুনিয়া ও জমিন)। যার মানে হল যা আমরা দেখি, শুনি, স্বাদ নেই, গন্ধ পাই এবং অনুভব করতে পারি তা সমস্ত কিছুই আল্লাহর সৃষ্টি।
(এবং অবশ্যই যা আমরা দেখতে পাই না যেমন বেহেস্ত, সেই বেহেস্তও তিনি সৃষ্টি করেছেন, যেখানে তিনি আছেন এবং ফেরেশতা ও তাদের মতো আরও স্বত্তা রয়েছে।)
তারপর তিনি বর্ণনা করলেন দুনিয়া কেমন ছিল যখন তিনি সেটা করছিলেন। এটির কোন স্থির কাঠামো ছিল না- এই অবস্থাটা এভাবে বোঝানো যায় যে একজন মহিলা রুটি তৈরীর পূর্বে ময়দার গোলা যেভাবে প্রস্তুত করে তার সাথে। দুনিয়াও সৃষ্টির শুরুতে পানির নীচে ছিল ও অন্ধকার ও শূন্যতায় ঢাকা ছিল।
সুতরাং, কোন উদ্ভিদ বা প্রানী এখানে অবস্থিতি করছিল না। কিন্তু আল্লাহর রুহ্ ঐ পানির উপরে বিচরণ করছিলেন কারণ এই দুনিয়ার বিষয়ে তাহার মহৎ পরিকল্পনা ছিল।
কিতাবুল মোকাদ্দসের লেখা রেয়েছে
পয়দায়েশ ১:৩-২৫ আল্লাহ্ বললেন, “আলো হোক।” আর তাতে আলো হল। তিনি দেখলেন তা চমৎকার হয়েছে। তিনি অন্ধকার থেকে আলোকে আলাদা করে আলোর নাম দিলেন দিন আর অন্ধকারের নাম দিলেন রাত। এইভাবে সন্ধ্যাও গেল সকালও গেল, আর সেটাই ছিল প্রথম দিন।
6তারপর আল্লাহ্ বললেন, “পানির মধ্যে একটা ফাঁকা জায়গার হোক, আর তাতে পানি দু’ভাগ হয়ে যাক।” 7এইভাবে আল্লাহ্ পানির মধ্যে একটা ফাঁকা জায়গার করলেন এবং নীচের পানি ও উপরের পানি আলাদা করলেন। তাতে উপরের পানি ও নীচের পানি আলাদা হয়ে গেল। 8আল্লাহ্ যে ফাঁকা জায়গার সৃষ্টিকরেছিলেন তার নাম তিনি দিলেন আসমান। এইভাবে সন্ধ্যাও গেল সকালও গেল, আর সেটাই ছিল দ্বিতীয় দিন।
9এর পর আল্লাহ্ বললেন, “আসমানের নীচের সব পানি এক জায়গায় জমা হোক এবং শুকনা জায়গা দেখা দিক।” আর তা–ই হল। 10আল্লাহ্ সেই শুকনা জায়গার নাম দিলেন ভূমি, আর সেই জমা হওয়া পানির নাম দিলেন সমুদ্র। আল্লাহ্ দেখলেন তা চমৎকার হয়েছে।
11তারপর আল্লাহ্ বললেন, “ভূমির উপরে ঘাস গজিয়ে উঠুক; আর এমন সব শস্য ও শাক–সবজীর গাছ হোক যাদের নিজের নিজের বীজ থাকবে। ভূমির উপর বিভিন্ন জাতের ফলের গাছও গজিয়ে উঠুক যেগুলোতে তাদের নিজের নিজের ফল ধরবে; আর সেই সব ফলের মধ্যে থাকবে তাদের নিজের নিজের বীজ।” আর তা–ই হল। 12ভূমির মধ্যে ঘাস, নিজের বীজ আছে এমন সব বিভিন্ন জাতের শস্য ও শাক–সবজীর গাছ এবং বিভিন্ন জাতের ফলের গাছের জন্ম হল; আর সেই সব ফলের মধ্যে তাদের নিজের নিজের বীজ ছিল। আল্লাহ্ দেখলেন তা চমৎকার হয়েছে। 13এইভাবে সন্ধ্যাও গেল সকালও গেল, আর সেটাই ছিল তৃতীয় দিন।
14তারপর আল্লাহ্ বললেন, “আসমানের মধ্যে আলো দেয় এমন সব কিছু দেখা দিক, আর তা রাত থেকে দিনকে আলাদা করুক। সেগুলো আলাদা আলাদা দিন, ঋতু আর বছরের জন্য চিহ্ন হয়ে থাকুক। 15আসমান থেকে সেগুলো দুনিয়ার উপর আলো দিক।” আর তা–ই হল। 16আল্লাহ্ দু’টা বড় আলো তৈরী করলেন। তাদের মধ্যে বড়টিকে দিনের উপর রাজত্ব করবার জন্য, আর ছোটটিকে রাতের উপর রাজত্ব করবার জন্য তৈরী করলেন। তা ছাড়া তিনি তারাও তৈরী করলেন। 17তিনি সেগুলোকে আসমানের মধ্যে স্থাপন করলেন যাতে সেগুলো দুনিয়ার উপর আলো দেয়, 18দিন ও রাতের উপর রাজত্ব করে আর অন্ধকার থেকে আলোকে আলাদা করে রাখে। আল্লাহ্ দেখলেন তা চমৎকার হয়েছে। 19এইভাবে সন্ধ্যাও গেল সকালও গেল, আর সেটাই ছিল চতুর্থ দিন।
20তারপর আল্লাহ্ বললেন, “পানি বিভিন্ন প্রাণীর ঝাঁকে ভরে উঠুক, আর দুনিয়ার উপরে আসমানের মধ্যে বিভিন্ন পাখী উড়ে বেড়াক।” 21এইভাবে আল্লাহ্ সমুদ্রের বড় বড় প্রাণী এবং পানির মধ্যে ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়ানো বিভিন্ন জাতের প্রাণী করলেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন জাতের পাখীও করলেন। তাদের প্রত্যেকের নিজের নিজের জাতি অনুসারে বংশ বৃদ্ধি করবার ক্ষমতা রইল। আল্লাহ্ দেখলেন তা চমৎকার হয়েছে। 22আল্লাহ্ তাদের এই বলে দোয়া করলেন, “বংশবৃদ্ধির ক্ষমতায় পূর্ণ হয়ে তোমরা নিজেদের সংখ্যা বাড়িয়ে তোলো, আর তা দিয়ে সমুদ্রের পানি পূর্ণ কর। দুনিয়ার উপরে পাখীরাও নিজের নিজের সংখ্যা বাড়িয়ে তুলুক।” 23এইভাবে সন্ধ্যাও গেল সকালও গেল, আর সেটাই ছিল পঞ্চম দিন।
24তারপর আল্লাহ্ বললেন, “মাটি থেকে এমন সব প্রাণীর জন্ম হোক যাদের নিজের নিজের জাতকে বাড়িয়ে তুলবার ক্ষমতা থাকবে। তাদের মধ্যে গৃহপালিত, বন্য ও বুকে–হাঁটা প্রাণী থাকুক।” আর তা–ই হল। 25আল্লাহ্ দুনিয়ার সব রকমের বন্য, গৃহপালিত এবং বুকে–হাঁটা প্রাণী করলেন। এদের সকলেরই নিজের নিজের জাতকে বাড়িয়ে তুলবার ক্ষমতা রইল। আল্লাহ্ দেখলেন তা চমৎকার হয়েছে।
ব্যাখ্যা
প্রথম যে জিনিসটি আল্লাহ সৃষ্টি করেছিলেন তা হলো আলো যেন এরপর তিনি যা যা করবেন তা যেন দেখা যায়। তিনি অন্ধকার সৃষ্টি করলেন না কারণ অন্ধকার সেখানে আগে থেকেই ছিল। তিনি আলোকে অন্ধকার থেকে পৃথক করলেন এবং নিশ্চিত করলেন এই বিষয়টি যেন আলোর পিছনে অনুসরণ করে আধার আসে। এইভাবেই তিনি দিন ও রাত সৃষ্টি করলেন।
এখানে লক্ষ্য করুন তিনি সবকিছু কত বিচক্ষণভাবে সৃষ্টি করলেন। তার সৃষ্টি গুলো কতটা যুক্তি সংগতভাবে একটার পর একটা সৃষ্টি হয়েছিল।
এর পরবর্তীতে, তিনি বায়ুমন্ডল সৃষ্টি করলেন যেন তার সৃষ্ট প্রাণীকূল স্বাস প্রশ্বাস নিতে পারে। বাতাসের জন্য মেঘ মাটি থেকে অনেক উপরে উঠে গেল যেন প্রাণীকূলকে সবসময় সাদা মেঘের মধ্যে চলাচল করতে না হয়।
তারপর তিনি দুনিয়ার ভূপৃষ্ঠের কিছু জায়গা উচু ও কিছু জায়গা নীচু সৃষ্টি করলেন। এটা দুনিয়ার সব পানিকে নীচু ও ঢালু জায়গায় জমতে সাহায্য করলো এবং তা বিস্তীর্ণ উচু শুকনো জায়গা বা মহাদেশগুলো সৃষ্টি করলো।
এই সময়ের মধ্যে দুনিয়া সবুজ হয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল এবং মাবুদ ঘাস, বীজ উৎপাদনকারী ফসল (শস্য) এবং গাছ সৃষ্টি করলেন। হঠাৎ দুনিয়া একটি বৃহত আকৃতির অতি সুন্দর একটি বাগানে রূপান্তর হতে শুরু করলো, যা খোদা যিনি একজন জ্ঞানী উদ্যানরক্ষক, তিনিই আবাদ করছিলেন। সেখানে অসংখ্য সবুজ গাছ ও রঙ্গিন ফুল ছিল।
দিন ও রাতের সময়ের ব্যাবধান মাবুদের সৃষ্ট প্রাণিকূলকে বিশ্রাম ও বিভিন্ন কর্মকান্ডে ডুবে থাকতে সাহায্য করলো, তাই আল্লাহ চাইলেন যেন তার সকল উদ্ভিদকূলের জন্য মৌসুম থাকে বেড়ে উঠাবার, ফলবান হওয়ার এবং যেন বিশ্রামেরও মৌসুম থাকে, তাই তিনি সৃষ্টি করলেন চন্দ্র, সূর্য, তাঁরা বা নক্ষত্র। এই গুলো আলো ও তাপ উৎপাদনে যেমন সাহায্য করছিল তেমনি ছয়টি ঋতুও সৃষ্টি করলো, যাদের আমরা আজকের দিনে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত নামে চিনি।
এই সময়ের মধ্যে, দুনিয়া প্রস্তুত হলো আরো অন্যান্য প্রানী ধারণ করতে, এবং তাই পঞ্চম দিনে, আল্লাহ বিভিন্ন রকমের ঝাকে ঝাকে মাছ সৃষ্টি করলেন সমুদ্রের জন্য আর আকাশের জন্য সৃষ্টি করলেন পাখি।
তারপর ষষ্ঠ দিনে, মাবুদ অন্যান্য সকল প্রানী সৃষ্টি করলেন কারণ ইতিমধ্যে কোটি কোটি বিভিন্ন রকম প্রানীকে খাওয়ানোর মতো সবুজ উদ্ভিদ ছিল। সুতরাং, তিনি ছোট ইদুর থেকে শুরু করে বড় হাতি পর্যন্ত সকল প্রানী সৃষ্টি করলেন।
কিছু লক্ষ্যনীয় বিষয়
খোদা কেন আমাদের সবকিছু কিতাবের মধ্য দিয়ে জানালেন? আসলে তিনি ভালোভাবেই জানেন যে আমরা অন্যান্য প্রাণীদের মতো নই যারা খাবার, পানি আর নিরাপত্তা পেলেই খুশি থাকে। জীবজন্তুরা এই দুনিয়ার অন্যান্য বিষয় নিয়ে এতো কিছু জানতে আগ্রহী নয়।
কিন্তু আমরা বুদ্ধিমান ও অনুসন্ধিৎসু প্রাণী এবং আমরা জানতে চাই যে আমরা কোথা থেকে এসেছি। এটা এমন একটা বিষয় যা কেবলমাত্র মাবুদ আল্লাহই আমাদেরকে বলতে পারবেন কেননা যখন তিনি আমাদের সহ বাদবাকী সকল কিছু সৃষ্টি করেছিলেন তখন সেখানে আর কেউ উপস্থিত ছিল না, এবং এই নিয়ে আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে আরো আলোচনা করবো।
এখানে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমরা মাবুদ আল্লাহর সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানতে পারি তার সকল সৃষ্টি পর্যালোচনা করে।
আমরা তাহার শক্তি ও মহত্ত্বের সামান্য নমুনা দেখতে পাই সমুদ্রের ঢেউ এর গর্জনে, বাতাসের জোরালো শব্দে, ভারী বর্ষণে, বিশাল আকৃতির পর্বতে, সূর্যের তাপ ও আলোতে এবং গ্রহ নক্ষত্রের ছায়াপথে।
আমরা তাহার সৃষ্টিশীলতা দেখতে পাই বিপুল সংখ্যার বিভিন্ন রকমের গাছপালা, ঝোপঝাড়, ফুল, মাছ, পশুপ্রাণী এবং পক্ষীকূল যা সমস্ত কিছুই তিনি সৃষ্টি করেছেন, যেগুলো একটি থেকে অপরটি পুরোপুরি ভিন্ন।
তার সৃষ্ট সকল প্রাণীর জন্য যে বিভিন্ন রকমের খাদ্য তিনি প্রস্তুত করেছেন, সেখানে তাদের জন্য তাহার ভালোবাসা আমরা দেখতে পাই। তিনি তাদের সৃষ্টি করে খিদে ও তৃষ্ণার জ্বালায় মরার জন্য ফেলে রাখেন নি। সব প্রানীদের সৃষ্টির পূর্বেই তিনি নিশ্চিত করেছিলেন যেন সবার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য থাকে।
সুতরাং, তাহার সৃষ্টি সকল দেখে আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে তিনি শক্তিধর, জ্ঞানী এবং স্নেহশীল।
আমরা এও স্বীকার করে নেই যে বালুর প্রত্যেকটি দানা, পানির প্রত্যেকটি ফোটা, প্রত্যেকটি গাছ, মাছ এবং প্রানী সবই তারই, কারণ সবই তারই – তিনিই একমাত্র মালিক।
তিনি সৃষ্টি করবার আগে এই দুনিয়ার কোন আকার ছিল না, এই দুনিয়ায় কোন প্রান ছিল না, ছিল শুধু অন্ধকার এবং তিনিই এই দুনিয়াকে মহতীপূর্ণ আশ্চর্য সুন্দর করলেন। সত্যিই মাবুদ আল্লাহ মহান।
//////////