(OUTPOURING OF THE HOLY SPIRIT)
পাক রুহে্র অবতারণ
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—
প্রেরিত ২:১-৩ পরে পঞ্চাশত্তমীর দিন উপস্থিত হলে তাঁরা সকলে এক স্থানে সমবেত হলেন। 2তখন হঠাৎ আসমান থেকে প্রচণ্ড বায়ুর বেগের শব্দের মত একটা আওয়াজ আসল এবং যে গৃহে তাঁরা বসেছিলেন, সেই আওয়াজে গৃহটি পূর্ণ হয়ে গেল। 3এমন সময়ে তাঁরা দেখতে পেলেন আগুনের জিহ্বার মত অনেক জিহ্বা অংশ অংশ হয়ে পড়ছে এবং সেই জিহ্বাগুলো এসে তাঁদের প্রত্যেক জনের উপরে বসলো। 4 তাঁরা পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হলেন আর ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে লাগলেন৷ পবিত্র আত্মাই তাদের এইভাবে কথা বলার শক্তি দিলেন৷
ব্যাখ্যা
পূর্বের অধ্যায়ে আমরা দেখেছি যে ঈসা তার সাহাবীদেরকে আদেশ দিয়েছিলেন রুহানী শক্তি লাভের জন্য তারা যেন জেরুজালেমেই অপেক্ষা করে। তাদেরকে পাক রুহ্ প্রাপ্ত হয়ে পরিপূর্ণ হতে হবে। সুতরাং, তাদের পাক রুহ্ গ্রহন করতে হবে যেন সব জাতিতে তার শিষ্য করবার যে ভারী দায়িত্ব রয়েছে তা যেন তারা সম্পাদন করতে পারে। তাই সেখানে তারা মুনাজাতের সাথে অপেক্ষা করলো।
আপনার এটাও হয়তো মনে আছে যে ঈসার তরিকাবন্দীর সময় পাক রুহ্ নেমে এসেছিল কবুতরের বেশে, যা কিনা শান্তির প্রতীক। আর এখন, যে কক্ষে তারা অপেক্ষা করছিলেন, সেই কক্ষে পাক রুহ্ তাদের প্রত্যেকের উপর নেমে আসলো আগুনের জিহ্বা হয়ে। পাক রুহ্ যখন নেমেছিলেন তখন বাতাসের গর্জনও হয়েছিল, যা দালানের ভিতরের ও বাইরের সকলে শুনেছিল।
বাতাস বা আগুনের তোপ থাকলে মানুষ এর সেখান থেকে পালানো খুব কঠিন হয়। এই দুই প্রতীক দিয়ে, আল্লাহ তাদের বুঝিয়েছিলেন যে সাহাবিরা যখন জাতিদের কাছে তাবলিগ করতে যাবে, তখন তাদের কথা যারা শুনবে, তারা সবাই অনেক প্রভাবিত হবে।
নাজাত লাভের সুখবর লোকদের জানানো হল
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে —
প্রেরিত ২: ৫-১৩ সেই সময়ে আসমানের নিচের সমস্ত দেশ থেকে আগত বহু ভক্ত ইহুদীরা এসে জেরুশালেমে বাস করছিল। 6আর তাদের অনেক লোক সেই ধ্বনি শুনে সমাগত হল এবং তারা হতবুদ্ধি হয়ে পড়ল, কারণ প্রত্যেক জন তাদের নিজ নিজ ভাষায় তাঁদেরকে কথা বলতে শুনছিল। 7তখন সকলে ভীষণ আশ্চর্য ও চমৎকৃত হয়ে বলতে লাগল, দেখ, এই যে লোকেরা কথা বলছে, এরা সকলে কি গালীলীয় নয়? 8তবে আমরা কেমন করে প্রত্যেকে নিজ নিজ মাতৃভাষায় কথা শুনছি? 9পার্থীয়, মাদীয় ও ইলামীয় লোক এবং মেসোপটেমিয়া, এহুদিয়া ও কাপ্পাদকিয়া, পন্ত ও এশিয়া, ফরুগিয়া ও পাম্ফুলিয়া, 10মিসর এবং লিবিয়া দেশস্থ কুরীণীর নিকটবর্তী অঞ্চল-নিবাসী এবং প্রবাসকারী রোমীয় ইহুদী ও ইহুদী-ধর্মাবলম্বী অ-ইহুদী লোকেরা এবং ক্রীটীয় ও আরবীয় লোক যে আমরা, 11আমাদের নিজ নিজ ভাষায় ওদেরকে আল্লাহ্র মহৎ মহৎ কাজের কথা বলতে শুনছি। 12এভাবে তারা সকলে চমৎকৃত হল ও হতবুদ্ধি হয়ে পরস্পর বলতে লাগল, এর অর্থ কি? 13অন্য লোকেরা পরিহাস করে বললো, ওরা মিষ্ট আঙ্গুর-রসে মাতাল হয়েছে।
ব্যাখ্যা
সেখানে সেদিন যারা পাক রুহ্ লাভ করেছিল তাদের মস্তিষ্কে এমন এমন ভাষা চলে এলো যা তারা আগে কখনো শুনেন নি এবং তাদের জিহবাও সেই বিভিন্ন ভাষাগুলো উচ্চারণ করতে শুরু করলো। এটার একটি উত্তম উদ্দেশ্য ছিল: যেন সকল ভাষাভাষী ঈসার সুসংবাদ বুঝতে পারে।
বিভিন্ন জাতি থেকে অসংখ্য মানুষ সেখানে জেরুজালেমে এসেছিল কারণ ইহুদী ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফেসাখ এর জন্য মহাভোজের আয়োজন করা হয়েছিল, তারা সকলে সেই দালানের দিকে দৌড়ে এলো কি হয়েছে দেখতে, যখন তারা সেখানে বাতাসের গর্জন শুনতে পেয়েছিল।
তখন সেই পাক রুহ্ প্রাপ্ত সাহাবীরা নীচে নেমে এলো, কারণ এখন আর তারা ইহুদী নেতাদের ভয় পান না এবং রাস্তায় নেমে এসে তারা অগণিত মানুষের ভীড় দেখে তাদের কাছে ঈসার সুসংবাদ প্রচার করতে লাগলেন যে ঈসা সকলের পাপের জন্য ক্রুশের উপর মৃত্যুবরণ করে আবার উঠলেন এবং প্রমাণ করলেন যে তিনিই আল্লাহর পুত্র এবং আল্লাহ্ তার কোরবানী কবুল করেছেন।
সেই লোকেরা যারা সাহাবীদের থেকে সুসংবাদ শুনলেন তাদের নিজের নিজের ভাষায়, তাই তারা সকলে বিভিন্ন ভাষাভাষী হয়েও বুঝতে পারলেন তার কি বলছিলেন। সেখানে প্রত্যেকে এমন চমৎকার দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন যে কিভাবে বিভিন্ন ভাষায় সাহাবীরা সাক্ষ্য দিলেন এবং সবাই পুরোপুরি নিশ্চিত হলেন যে সাক্ষ্য তারা শুনলেন তা সত্যি।
হযরত পিতরের তবলিগ
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে —
প্রেরিত ২:১৪-২১ কিন্তু পিতর এগার জনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে উচ্চৈঃস্বরে তাদের কাছে বক্তৃতা করে বললেন, হে ইহুদী লোকেরা, হে জেরুশালেম-নিবাসী সকলে, তোমরা এই কথা জেনে রাখ এবং আমার কথা শুন। 15কেননা তোমরা যে অনুমান করছো, এরা মাতাল, তা নয়, কারণ এখন তো সকাল নয় ঘটিকা মাত্র। 16কিন্তু এটি সেই ঘটনা, যার কথা যোয়েল নবীর মধ্য দিয়ে বলা হয়েছে,
17“শেষ কালে এরকম হবে, এই কথা আল্লাহ্ বলছেন, আমি মানুষের উপরে আমার রূহ্ সেচন করবো; তাতে তোমাদের পুত্ররা ও তোমাদের কন্যারা ভবিষ্যদ্বাণী বলবে, আর তোমাদের যুবকেরা দর্শন পাবে, এবং তোমাদের প্রাচীনেরা স্বপ্ন দেখবে। 18আবার আমার গোলামদের উপরে এবং আমার বাঁদীদের উপরে সেই সময়ে আমি আমার রূহ্ সেচন করবো, আর তারা ভবিষ্যদ্বাণী বলবে।
19আমি উপরে আসমানে নানা অদ্ভুত লক্ষণ এবং নিচে দুনিয়াতে নানা চিহ্ন রক্ত, আগুন ও ধোঁয়া দেখাবো। 20প্রভুর সেই মহৎ ও প্রসিদ্ধ দিনের আগমনের আগে সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে, চন্দ্র রক্ত হয়ে যাবে; 21আর এরকম হবে, যে কেউ প্রভুর নামে ডাকবে, সেই নাজাত পাবে।”
ব্যাখ্যা
যখনই সেই উত্তেজনাপূর্ণ সময় আস্তে আস্তে ক্ষীণ হলো, পিতর একজন নেতা হিসেবে বুঝতে পেরেছিলেন যে, যে বড় ভিড় তার সামনে রয়েছে তাদের কাছে তাকে এখন কথা বলতে হবে। তিনি সামনে এগিয়ে এলেন এবং তাদেরকে ব্যাখ্যা করলেন যে এখানে যা যা হয়েছে তা আগেই ঠিক করা ছিল, কারণ নবী যোয়েল আগেই ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন পাক রুহ্ নেমে আসবে এবং তার ফলে কি কি চিহ্ন হবে। তারপর তিনি সেই ইতিহাসের সাথে ঈসা যে মানুষের পাপের জন্য মরেছেন তার সম্পর্ক দেখালেন। পরিশেষে, তিনি তাদেরকে নিশ্চয়তা দিলেন যে যারা আল্লাহর কাছে মুনাজাত করবে এবং ক্ষমা চাইবে, তারা সবাই নাজাত পাবে।
প্রথম অনুতপ্ত মানুষজন
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে —
প্রেরিত ২:৩৭-৪১ এই কথা শুনে তাদের অন্তরে যেন শেল-বিদ্ধ হল এবং তারা পিতরকে ও অন্য প্রেরিতদেরকে বলতে লাগল, ভাইয়েরা, আমরা কি করবো? 38তখন পিতর তাদেরকে বললেন, মন ফিরাও এবং তোমরা প্রত্যেক জন তোমাদের গুনাহ্ মাফের জন্য ঈসা মসীহের নামে বাপ্তিস্ম নেও; তা হলে পাক-রূহ্রূপ দান পাবে। 39কারণ তোমাদের জন্য, তোমাদের সন্তানদের জন্য এবং দূরবর্তী সকলের জন্য অর্থাৎ, যত লোককে আমাদের আল্লাহ্ প্রভু ডেকে আনবেন তাদের সকলের জন্য এই ওয়াদা করা হয়েছে। 40এছাড়া, আরও অনেক কথা বলে তিনি সাক্ষ্য দিলেন ও তাদেরকে উপদেশ দিয়ে বললেন, এই কালের কুটিল লোকদের থেকে তোমাদের নিজেদেরকে রক্ষা কর। 41তখন যারা তাঁর কথা গ্রাহ্য করলো, তারা বাপ্তিস্ম নিল; তাতে সেদিন কমবেশ তিন হাজার লোক তাঁদের সঙ্গে সংযুক্ত হল।
ব্যাখ্যা
ঠিক যেমনভাবে ঈসা ওয়াদা করেছিলেন, পাক রুহ্ সেইভাবে পিতর ও অন্যান্য বক্তাদের এবং সেখানে আরও অনেক লোকের হৃদয় স্পর্শ করলেন। তারা তাদের গুনাহের জন্য গভীরভাবে চিন্তিত হলেন এবং জানতে চাইলেন মাফ পেতে হলে তাদের কি করতে হবে।
পিতর তাদের উত্তর দিলেন যে তাদের গুনাহের জন্য তাদের অনুতাপ করতে হবে এবং পানিতে তরিকাবন্দী নিতে হবে (তারা যে তাদের গুনাহের জন্য অনুতাপ করেছে এবং ঈসাকে নাজাতদাতা হিসেবে গ্রহন করেছে তরিকাবন্দী তারই সাক্ষ্য বহন করে)। পিতা আল্লাহ্ তাদের মাফ করবেন এবং পাক রুহকে তাদের হৃদয়ে দিবেন উপহার হিসেবে যেন তারা আল্লাহর সন্তানে পরিনত হতে পারে।
এই উপহার তিনি বিনামূল্যেই দেন, এর জন্য কাউকে টাকা দিতে হয় না, বা কোন পশু কোরবানী দিতে হয় না, প্রথমে কিছুদিনের জন্য ভালো হয়ে চলতে হয়না। এটাই ছিল আল্লাহর ওয়াদা।
সেদিন আল্লাহর থেকে আসা এমন বাক্য শুনে তারা খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন। তারা তাই করলেন পিতর যা তাদের করতে বললেন এবং সেদিন কমবেশ ৩০০০ লোক নাজাত পেল ও তরিকাবন্দী নিল।
//////////