(CREATION OF MAN)
কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে—-
পয়দায়েশ ১:২৬তারপর আল্লাহ্ বললেন, “আমরা আমাদের মত করে এবং আমাদের সংগে মিল রেখে এখন মানুষ তৈরী করি। তারা সমুদ্রের মাছ, আকাশের পাখী, পশু, বুকে–হাঁটা প্রাণী এবং সমস্ত দুনিয়ার উপর রাজত্ব করুক।” ২৭পরে আল্লাহ্ তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন। হ্যাঁ, তিনি তাঁর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন, করলেন পুরুষ ও স্ত্রীলোক করে।
পয়দায়েশ ২:৭ পরে মাবুদ আল্লাহ্ মাটি দিয়ে একটি পুরুষ মানুষ তৈরী করলেন এবং তার নাকে ফুঁ দিয়ে তার ভিতরে জীবন্তবায়ু ঢুকিয়ে দিলেন। তাতে সেই মানুষ একটি জীবন্ত প্রাণী হল।
পয়দায়েশ ২:১৮ পরে মাবুদ আল্লাহ্ বললেন, “মানুষটির পক্ষে একা থাকা ভাল নয়। আমি তার জন্য একজন উপযুক্ত সংগী তৈরী করব।” ১৯ মাবুদ আল্লাহ্ মাটি থেকে ভূমির যে সব জীবজন্তু ও আকাশের পাখী তৈরী করেছিলেন সেগুলো সেই মানুষটির কাছে আনলেন। মাবুদ দেখতে চাইলেন তিনি সেগুলোকে কি বলে ডাকেন। তিনি সেই সব প্রাণীগুলোর যেটিকে যে নামে ডাকলেন সেটির সেই নামই হল। ২০তিনি প্রত্যেকটি গৃহপালিত ও বন্য পশু এবং আকাশের পাখীর নাম দিলেন, কিন্তু সেগুলোর মধ্যে সেই পুরুষ মানুষটির, অর্থাৎ আদমের কোন উপযুক্ত সংগী দেখা গেল না।
২১ সেইজন্য মাবুদ আল্লাহ্ আদমের উপর একটা গভীর ঘুম নিয়ে আসলেন, আর তাতে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। তখন তিনি তাঁর একটা পাঁজর তুলে নিয়ে সেই জায়গাটা বন্ধ করে দিলেন। ২২আদম থেকে তুলে নেওয়া সেই পাঁজরটা দিয়ে মাবুদ আল্লাহ্ একজন স্ত্রীলোক তৈরী করে তাঁকে আদমের কাছে নিয়ে গেলেন। ২৩ তাঁকে দেখে আদম বললেন, “এবার হয়েছে। এঁর হাড়–মাংস আমার হাড়–মাংস থেকেই তৈরী। পুরুষ লোকের শরীরের মধ্য থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে এঁকে স্ত্রীলোক বলা হবে।” ২৪এইজন্যই মানুষ পিতা–মাতাকে ছেড়ে তার স্ত্রীর সংগে এক হয়ে থাকবে আর তারা দু’জন এক শরীর হবে। ২৫তখন আদম এবং তাঁর স্ত্রী উলংগ থাকতেন, কিন্তু তাতে তাঁদের কোন লজ্জাবোধ ছিল না।
ব্যাখ্যা
মানুষকে কিভাবে সৃষ্টি করা হল
খোদার জন্য এটি একটি আনন্দের সময় ছিল যখন তার সমস্ত সৃষ্ট কার্য সম্পন্ন হয়েছিল, এবং ততোক্ষণে খোদার জন্য এমন একটা সময় এস পড়েছিল যখন তিনি এমন দুইজন প্রানী সৃষ্টি করতে চাইছিলেন যাদের সাথে খোদার সাদৃশ্য থাকবে। এটা খোদার জন্য এমনই একটি আনন্দের মুহূর্ত ছিল ঠিক যেমন পিতা মাতা যখন প্রথম তাদের নবজন্ম লাভ করা শিশুকে দেখে আনন্দ পায়।
এই আয়াতগুলোতে, আল্লাহ ব্যাখ্যা করেছেন কিভাবে মানুষ সৃস্টি করা হয়েছিল। তিনি প্রথমে পুরুষ সৃষ্টি করেছিলেন জমি থেকে মাটি দিয়ে এবং তার নাসারন্ধ্রে তিনি ফু দিয়ে তাহার নিজের নিশ্বাস প্রবেশ করালেন, যার অর্থ তিনি জীবন ঢুকিয়ে দিলেন তার নাসারন্ধ্রে, তাই তিনি জীবিত হয়ে ঊঠলেন।
তারপর খোদা তার দেহ থেকে পাজঁর খুলে নিলেন এবং তার জন্য তার স্ত্রী সৃষ্টি করলেন। সেই পুরুষের সাথে তার কিছু মিল থাকলেও তিনি ভিন্ন ছিলেন। তিনি মহিলা ছিলেন তাই তারা শারিরিক মিলন করতে পারতেন এবং বংশবৃদ্ধি করতে পারতেন।
তারা অন্যান্য যেকোন জীবজন্তুর চেয়ে অনেক উচু স্তরের ছিলেন। তারা বুদ্ধিমান ছিলেন এবং আল্লাহ তাদের উপভোগের জন্য যা কিছু সৃষ্টি করেছিলেন তার সবকিছুর জন্য তার শুকরিয়া আদায় করতেন। তারা আল্লাহর সাথে কথা বলতে পারতেন এবং আল্লাহ তাদের দেখতে যেতেন এবং তার সৃষ্টি নিয়ে তাদের সাথে কথা বলতেন।
আল্লাহের প্রতি মানুষের অধীনতা
ঠিক যেই মুহূর্তে আদম ও হাওয়া জীবনলাভ করলেন, তারা তখন চোখ খুলেই আল্লাহকে দেখেছিলেন এবং আল্লাহকে জানতে পেরেছিলেন। তিনিও সম্ভবত তাদের সাথে কথা বলেছিলেন, দুনিয়ায় তাদেরকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
তারপরের কিছু দিন ও মাস তারা বাগানে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন যেখানে তাদেরকে রাখা হয়েছিল, তারা সেখানে সবকিছু দেখে বুঝতে পেরেছিলেন যে আল্লাহের মতো আর কেউ নেই, এবং তারা উপলব্ধি করেছিলেন যে সবকিছুর তিনিই একমাত্র মালিক। খুব সম্ভবত তিনি তাদেরকে বলেছিলেন যে কিভাবে তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছিলেন যা তিনি আমাদেরকেও জানিয়েছেন কিতাবের মধ্য দিয়ে।
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সত্য কারণ এর অর্থ হচ্ছে যে তিনিই তাদের সৃস্টিকর্তা এবং তাদেরকে অবশ্যই খোদার নিকট সব দিক থেকে আল্লাহর অধীন হতে হবে। এই দুনিয়ার সবকিছু এমনকি তাদের মালিকও আল্লাহ। সবকিছু তার। তারা এমন কোন জায়গায় যেতে পারে না যেখানে খোদার মালিকানা নেই। তারা নিশ্চিতভাবে অন্য কোথাও যেতেও চাননি কারণ আল্লাহপাক সবকিছু এত সুন্দর সৃষ্টি করেছিলেন যে তার থেকে আর কিছু ভালো হতেই পারে না।
এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সত্যের মুখোমুখি আমাদেরকে হতেই হবে। যা হলো আমরাও সেই একই দুনিয়ায় আছি, এমন এক দুনিয়া যেখানে আমরা বালির একটা কণা বা একফোটা পানিরও মালিক নই। কারণ মহান আল্লাহপাক এই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন তার নিজের উৎস থেকে এবং সবকিছুর নকশা তিনিই করেছেন। এমনকি আমাদের নিজেদের মালিকও আমরা নিজেরা নই কারণ যে সকল উপাদান দিয়ে আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে, সেই উপাদানও খোদা সৃষ্টি করেছেন এবং যেভাবে আমরা আমাদের মায়ের গর্ভে জন্ম নেই সেই প্রক্রিয়াও তিনিই সৃষ্টি করেছেন।
পরিশেষে আমরা একটিই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে মহান আল্লাহপাকের কাছে অধীনতা স্বীকার করা ছাড়া আমাদের আর কোন রাস্তা নেই, এবং এটা একেবারেই অযৌক্তিক নয়, যেহেতু আমাদের খোদা খুবই স্নেহশীল।
এই বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই আমাদেরকে এখন থেকে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে।
//////////